
সিকল সেল অসুখের
অকথিত কাহিনি


জোয়েলের কাহিনি
13
আক্রা
ঘানা
আমি কে?
আমার নাম প্রিন্সেস এবং আমার ছেলে জোয়েলের সিকল সেল অসুখ আছে। আমরা ঘানাতে থাকি। জোয়েলের 2 জন ভাই-বোনের সঙ্গে আমি তাকে একা হাতে বড় করেছি, কারণ 12 বছর আগে জোয়েলের জন্মের পর তার বাবা ছেড়ে চলে যান, এবং আর কখনও ফিরে আসেননি। জোয়েলের 4 বছর বয়সে তার সিকল সেল অসুখ ধরা পড়েছিল। সিকল সেল অসুখের গুরুতর বেদনার ফলে তার অনেকবার স্ট্রোক হয়েছিল। এই হল আমাদের কাহিনি।
আমাদের সিকল সেলের কাহিনি
জোয়েলের যখন 4 বছর বয়স, তখন তার আঙুল ফুলে ব্যথা করছিল, তাই আমি তাকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সেখানে বলেছিল এটা ড্যাক্টাইলিটিস, সম্ভবত সেই কারণে তার চিকিৎসক উদ্বিগ্ন ছিলেন। তাকে কিছুদিন হাসপাতালে রাখা হয়েছিল। সেই সময়েই জোয়েলের সিকল সেল অসুখ ধরা পড়েছিল। প্রতি মাসে তাকে নিয়ে আমাকে হাসপাতালে যেতে আসতে হত।

জোয়েলের স্ট্রোক
জোয়েলের 7 বছর বয়সে, একদিন সিকল সেল অসুখের জন্য তার স্ট্রোক হয়েছিল। সেই প্রথম স্ট্রোকে তার বাঁ দিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, কিন্তু তখনও সে হাঁটতে ও কথা বলতে পারত। এক বছর পর, জোয়েলের 8 বছর বয়সে, তার দ্বিতীয় স্ট্রোক হয়েছিল। সেই দ্বিতীয় স্ট্রোকের পর সে তার বাঁ দিক নড়াচড়া করতে অক্ষম হয়ে গিয়েছিল—সে আংশিকভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে গিয়েছিল—এবং তার কথা বলার ক্ষমতা চলে গিয়েছিল। যখন জোয়েল কথা বলতে চায় ও চেষ্টা করে, সে নানা আওয়াজ করে। সে হাসে ও “মা” ধরণের শব্দ বলে। লোকজনের সঙ্গে জোয়েল ইশারায় ও নোট লিখে কথা বলে। কপাল ভাল, সে এখনও ভালভাবে শুনতে পায়।

জোয়েলের লেখাপড়া
জোয়েলের স্ট্রোক হওয়ার জন্য, সে একটা ঘরে 4 বছর ধরে বন্দী ছিল এবং তার লেখাপড়ার জন্য কয়েক বছরের ক্ষতি হয়েছিল। সৌভাগ্যবশত, সে এখনও স্কুলে যেতে পারে, কিন্তু কারও সহায়তা নিতে হয়। আমি প্রতিদিন তাকে স্কুলে নিয়ে যাই ও নিয়ে আসি। মাঝেমাঝে জোয়েল এবড়োখেবড়ো রাস্তায় হাঁটতে পারে না এবং কখনও কখনও দাঁড়ানোর জন্য হাত ধরতে হয়, তাই আমি তার হাত ধরে স্কুলে নিয়ে যাই ও নিয়ে আসি। জোয়েলকে নিয়ে আমার চিন্তা হয়, যদি আমি তার খেয়াল রাখতে না পারি, যদি আমি তাকে স্কুলে নিয়ে যেতে না পারি, তাহলে তার কি হবে।

আমাদের সমস্যা
জোয়েলের অসুবিধা সত্ত্বেও সে এখনও পড়াশোনা করছে, সেটা খুবই ভাল, কিন্তু তার খেয়াল রাখা খুবই কঠিন—তাকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া, খাওয়ানো, ও জামাকাপড় পরানো। সত্যিই মাঝেমাঝে সেটা কঠিন হয়ে পড়ে। জোয়েলের খেয়াল রাখার জন্য আমার জীবনের উপর বিশাল চাপ পড়েছে, কারণ আমাকে বাড়িতে থেকে সবসময় তার খেয়াল রাখতে হয়। এবং তার স্ট্রোকের জন্য, আমি আমার নিজের কাজ ও রোজগার খুইয়েছি, যার ফলে আমরা আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে গেছি। সিকল সেল অসুখের কবলে পড়ে আমি ও জোয়েল আমাদের সম্মুখীন সমস্যার সঙ্গে রোজ প্রাণপণ লড়ে বেঁচে আছি। পরবর্তী জটিলতা কখন ঘটবে কিছুই জানি না এবং কখন জোয়েলের আরেকবার স্ট্রোক হবে সেটা জানাও খুব কঠিন।

নানার কাহিনি
25
আক্রা
ঘানা
আমি কে?
আমার নাম নানা, আমি ঘানার আক্রায় থাকি—আমার বিশ্বাস, এই দেশে বিশ্বের যেকোনও জায়গার থেকে সর্বাধিক সংখ্যক মানুষ সিকল সেল অসুখ নিয়ে বেঁচে আছেন। সিকল সেল অসুখ সম্বন্ধে আমরা যত বেশি কথা বলব ও আমাদের কাহিনি জানাব, মানুষ তত বেশি আমাদের কথা শুনবেন ও বুঝবেন।
আমার সিকল সেলের কাহিনি
আমার সিকল সেল অসুখ আছে এবং আমার আরোগ্যের ও বিশ্রামের জন্য অনেক সময় বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়, যার ফলে আমার রোজগার ও জীবনকে উপভোগের সম্ভাবনা সীমিত হয়ে যায়। ব্যথার মতো একটা জটিলতা থেকে অন্যান্য জটিলতা আরম্ভ হয়। সিকল সেল অসুখের সঙ্গে জড়িত অপমানের জন্য একটা কারখানায় পানীয় জলের কারিগর হিসেবে আমার কাজ আমি খুইয়েছি। একদিন আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম, এবং যখন কাজে ফিরে এসেছিলাম তখন আমার কাজ চলে গিয়েছিল। ব্যথাবেদনার সময়ে সেরে ওঠার জন্য প্রচুর সময় লাগবে, এরকম কারও সঙ্গে আমার বসেরা কাজ করতে চাননি। এই কাজ যাওয়ার ফলে আমাকে টিকে থাকার জন্য লড়তে হচ্ছে।

অপমানের প্রতি আমার উত্তর
বহু মানুষ তাঁদের অসুখ লুকিয়ে ভয়ে ভয়ে বেঁচে থাকেন যে, তাঁদের প্রতি অন্যভাবে আচরণ করা হবে বা কখনও কাজ পাবেন না। আমার মনে হয়, লুকিয়ে রাখার বদলে সিকল সেল রোগাক্রান্ত মানুষদের এটি সম্বন্ধে কোনও সংস্কার ছাড়া আরও বেশি খোলাখুলি কথা বলা শুরু করা দরকার। অসুখে আক্রান্ত হওয়াটা মানুষ লজ্জাজনক হিসেবে মনে করেন, ও আমাদের দায়ভার হিসেবে বিবেচনা করেন। অসুখ লুকিয়ে রাখলে সেটি সংক্রান্ত অপমান ও লজ্জা আরও ঘনীভূত হয়। যদি লোকজন যথেষ্ট সাহসী হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে তাঁদের সমস্যা সম্বন্ধে কথা বলেন, তাহলে হয়ত অসুখটা সম্বন্ধে আরও ভালভাবে বোঝা যাবে এবং হয়ত নিয়োগকারীরা বুঝবেন যে, সিকল সেল রোগাক্রান্ত প্রত্যেকের একইরকমের ভোগান্তি হয় না এবং তাঁদের কাজ সফলভাবে করার জন্য অসুখের কারণে তাঁদের নিষিদ্ধ করা যেতে পারে না।

পৃথিবীর কাছে আমার বার্তা
আমাদের উচিৎ সমস্যা সামলে ওঠার পদ্ধতি জানানো ও সেইসব সাংঘাতিক সময়ে কেমন অনুভব হয় সেই বিষয়ে কথা বলা, কারণ এইভাবে প্রয়োজনের সময়ে আমরা অন্যান্যদের জীবনে আশা ও স্বস্তি জাগিয়ে তুলতে পারি। আমি বিশ্বাস করি, সিকল সেল অসুখ নিয়ে বেঁচে থাকাটা মৃত্যুদণ্ড নয়। আপনি সিকল সেল অসুখে আক্রান্ত হন বা না হন, কোনও কিছুই আপনাকে আটকাতে পারে না। সর্বদা মনে রাখুন আশাবাদী থাকতে হবে। স্বাভাবিক জীবনের জন্য আশা থাকবে। আপনি যদি খুব ভাল স্বাস্থ্যসুরক্ষা পান, তাহলে আপনি কাজ করতে পারবেন, এবং যখন আপনি কাজ করবেন, তখন নিজের ও পরিবারের খেয়াল রাখার জন্য আপনি কিছু আয় করবেন। আশা আছে। সকলের জন্য আশা আছে।

ইয়োল্যান্ডের কাহিনি
35
প্যারিস
ফ্রান্স
আমি কে?
আমার নাম ইয়োল্যান্ডে, আমি ফ্রান্সের প্যারিসে জন্মেছিলাম। আমার বাবা-মা আদতে পশ্চিম আফ্রিকার বেনিন থেকে এসেছিলেন। আমার সিকল সেল অসুখ আছে, যেটাকে আমি একটা নদীর মতো মনে করি। মাঝেমাঝে নদীটা তীব্র হয়ে ওঠে এবং আপনাকে ঝড়ঝাপটার মুখোমুখি হয়ে উদ্দাম স্রোত কাটিয়ে উঠতে হয়।
আমার সিকল সেলের কাহিনি
আমার তিন বোনের মধ্যে সবথেকে বড়জনেরও সিকল সেল অসুখ আছে, কিন্তু আমার অন্যান্য বোনেদের সেই লক্ষণ নেই। আমার পরিবারের সিকল সেল অসুখের ইতিহাসের জন্য, চিকিৎসকেরা আমার মায়ের গর্ভাবস্থাতেই আমার সিকল সেল অসুখ ধরে ফেলেছিলেন। যখন আমরা ছোটো ছিলাম, আমার পরিবার বেনিনে চলে গিয়েছিল, কিন্তু আমার বোনের অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ার জন্য আবার ফ্রান্সে ফিরতে হয়েছিল। যখন দ্বিতীয়বার আমরা বেনিনে গিয়েছিলাম, আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম, এবং চিকিৎসার জন্য আমাদের আবার ফ্রান্সে ফিরতে হয়েছিল। মেলায়, পার্টিতে, ও স্কুলের ট্রিপে যাওয়া আমার জন্য বারণ ছিল। যখনই আনন্দ করার পরিকল্পনা করা হত, তখনই অসুখটা জেগে উঠত। তখন থেকে আমি এটাকে একটা অস্তিত্ব হিসেবে মেনে নিই। এই সিকল সেল অসুখটাকে। এটা একটা দৈত্যের মতো, রাক্ষসের মতো। আমার 13 বছর বয়সে, আমার মা পরিবার সমেত বেনিনে ফেরার জন্য তৃতীয়বার চেষ্টা করেছিলেন। আমাদের সাবধানতা সত্ত্বেও, আমার হাড়ে গুরুতর সংক্রমণ হয়েছিল, ফলে আমাদের আবার ফ্রান্সে ফিরে আসতে হয়েছিল।

আমার পড়াশোনা ও কাজকর্ম
ইউনিভার্সিটিতে আমার প্রথম বছরে, আমি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম, ফলে পরীক্ষায় বসতে পারিনি। কিন্তু সেই বছরটা নষ্ট করার বদলে, আমি নিজের উপর জোর দিয়ে কঠোর শ্রম করে পরীক্ষায় পাস করেছিলাম। এগিয়ে যাওয়ার জন্য নিজেকে উৎসাহ দিতে আমি রাগ ও দৃঢ় সংকল্প ব্যবহার করেছিলাম। এখন আমার 3 খানা মাস্টার্স ডিগ্রি আছে এবং 4 খানা ভাষায় কথা বলতে পারি, কিন্তু আমি এখনও রোজগারহীন। এটা অপমানজনক, কারণ আপনি স্বাভাবিকভাবে বাঁচার জন্য লড়ছেন, কিন্তু নিজেকে এরকম অবস্থায় দেখছেন। রোজগারহীনতার জন্য মাঝেমাঝে নিজেকে ব্যর্থ মনে হয়, মাঝেমাঝে আমি আশা হারিয়ে ফেলি। একসময় আমি নেদারল্যান্ডে আমার স্বপ্নের কাজ করতাম, যেখানে মাসে কয়েকবার প্লেনে যাতায়াত সহ আমাকে ভ্রমণ করতে হত। মারটিনিকে যাওয়ার সময় এক মাসকালীন ব্যথাবেদনার কারণে বুকের তীব্র সমস্যার পর আমার কাজটা চলে যায়। একটা নিকটবর্তী হাসপাতালে আমি 15 দিন ছিলাম এবং তারপর সঙ্গে সঙ্গে আমি ফিরতে পারছিলাম না, কারণ আমি খুব দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম। প্লেনে যাওয়ার ধকল মারাত্মক হতে পারে বা আরেকটা সমস্যা এনে দিতে পারে। আমার অবস্থায় বিশেষ যত্ন নেওয়ার প্রয়োজন হয়, কারণ সফরের ধকল আমার সিকল সেল অসুখ বাড়িয়ে তুলতে পারে।

আমার সহায়ক ব্যবস্থা
নিজেদের প্রমাণ করার জন্য সিকল সেল রোগাক্রান্তদের নিজেদের কাজকর্মে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। আমরা সবসময় নিজেদের প্রশ্ন করি। আমরা কি ভুল করেছি? এটা কেন হল? আপনার আত্মমর্যাদার জন্য এটা সত্যিই খারাপ। আমি খুবই আত্মবিশ্বাসী থাকতাম, কিন্তু ব্যথাবেদনা শুরু হওয়ার পর থেকে, আমার আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনার জন্য আমাকে যুঝতে হয়। আমার পরিবার, বন্ধুরা, ও সিকল সেল আক্রান্তদের মধ্যে অন্যান্যদের বিশাল সহায়তা পেয়ে আমি সৌভাগ্যশালী ছিলাম। আমি এখন ফ্রেঞ্চ ফেডারেশন অফ সিকল সেল অ্যান্ড থ্যালাসেমিয়া রোগীদের প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট হয়েছি। ফেডারেশনের অন্যান্য রোগীরা আমার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সহায়তা করেন। আমার মনে হয়, সিকল সেল আমাকে আরও বলশালী করে তুলেছে, এবং আমার অসুখ সত্ত্বেও যা কিছু আমি অর্জন করেছি সেসব নিয়ে আমি সত্যিই গর্বিত।

পৃথিবীর কাছে আমার বার্তা
আমি রোগীদের ও তাঁদের পরিবারকে বলতে চাই যে, সুস্থির সময় আসবেই। আমি তাঁদের জানাতে চাই যে, আশা করার, লড়াই জারি রাখার, নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী জীবনকে উপভোগ করার মতো কারণ এখনও আছে। আমি সবাইকে ও উচ্চস্তরের কর্তৃপক্ষদের বলতে চাই: রোগীদের ও তাঁদের পরিবারকে আরও সহায়তা করুন। আরও সহনশীল হন, কারণ আপনি জানেন না অন্যজন তাঁর জীবনে কেমন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।

ইলোডির কাহিনি
26
প্যারিস
ফ্রান্স
আমি কে?
আমার নাম ইলোডি, আমি ফ্রান্সের প্যারিসের একজন 26 বছর বয়সী রিসেপশনিস্ট। আমাকে প্রতিদিন সিকল সেল অসুখে ভুগতে হয়, কিন্তু সেইজন্য আমি থেমে থাকি না—আমি একজন সিকল সেল যোদ্ধা।
আমার সিকল সেলের কাহিনি
এখনের তুলনায় ছোটোবেলায় আমি অনেক বেশি সময় হাসপাতালে থাকতাম। আমি সবসময় হাসপাতালে ছিলাম। মাঝেমাঝে মাসে দুবার ভর্তি হতাম। এতে সবকিছুর ক্ষতি হয়েছিল। আমার স্কুল। আমার বন্ধুবান্ধব। আমার শখ। আমার পরিবার। আমার পিত্তের সমস্যা ছিল, আমার অগ্ন্যাশয়ের সমস্যা ছিল, ব্যথাবেদনা হত, এবং সাংঘাতিক শ্বাসকষ্টের মতো অন্য অনেক উপসর্গ ছিল। আমার অপারেশন হয়েছিল, এবং আমি ভেবেছিলাম সবকিছু শেষ হয়ে গেল। আমি ভেবেছিলাম সবকিছু শেষ হয়ে গেল। অনেকগুলো সার্জারির মধ্যে 2011 সালে সবথেকে বড়টা হয়েছিল, যার দাগ আমি আজও বয়ে চলেছি।

ফিটনেসের প্রতি আমার দৃষ্টিভঙ্গি
ইদানীং আমি অনেক সুস্থ আছি। আমার আর শ্বাসকষ্ট হয় না। আমার অনেক বেশি এনার্জি আছে এবং চমৎকার বোধ করি। কয়েক বছর আগে, আমি শ্যান্সেলের দ্বারা চালিত একটা ফিটনেস ক্লাসে গিয়েছিলাম। শ্যান্সেল একজন পার্সোনাল ট্রেইনার, যার ভাই সিকল সেল অসুখের সমস্যায় খুব কম বয়সে মারা গিয়েছিল, এবং যাতে আমি সবল হয়ে উঠি সেইজন্য আমরা একসঙ্গে পরিকল্পনা করেছিলাম। আমি শারীরিক ও মানসিক দুদিক থেকেই সবল হওয়ার সংকল্প নিয়েছিলাম। আমার স্কুলের সব বন্ধুদের তুলনায় অনেক পরে আমার যৌবনারম্ভ হয়েছিল, তাই আমি অধিকাংশের তুলনায় অনেক খাটো ও দুর্বল ছিলাম, এবং সেটাই খেলাধুলো ও নিজেকে ফিট রাখার প্রতি আমার গভীর আগ্রহের চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছিল। আমি স্বচ্ছন্দে ভারী বল সুইং করতে, ভারী ট্র্যাক্টর টায়ার ওলটাতে, ও ক্ষিপ্র কসরত অনুশীলন করতে পারি। আমি বুঝতে পারি আমার দেহে পরিবর্তন ঘটছে এবং নিজেকে সবল অনুভব করি। এবং এখন, শ্যান্সেলের সহায়তায়, আমি তাঁর ক্লাস চালাতেও সাহায্য করি।

আমার সামাজিক জীবন
2011 সালে দীর্ঘ 4 মাস যখন আমার সার্জারির জন্য আমি হাসপাতালে ছিলাম, তখন আমার অসুখ, হাসপাতালে থাকা, ও সেরে ওঠা সম্বন্ধে আমার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের একটা সুবিশাল পরিবারের মতো বেঁধে রেখেছে, এখানে আমরা ঘটনাগুলো জানাতে, অভিজ্ঞতা আলোচনা করতে, নতুন লোকদের সঙ্গে আলাপ করতে, ও সিকল সেল অসুখে আক্রান্ত মানুষেরা কি কি করতে পারেন সেসব দেখতে পারি। আমি নিজের ব্যায়ামের ভিডিও ও ফটো শেয়ার করি, যাতে বোঝা যায় সিকল সেল অসুখ নিয়েও আপনি সুস্থ জীবন যাপন করতে পারেন এবং সিকল সেলে আক্রান্ত অন্যান্যরাও এগিয়ে যেতে উৎসাহ পান। সেখানে নিজেকে প্রকাশ করে ও আরও কাজ করতে মানুষকে উৎসাহ দিয়ে আমার ভাল লাগে। আমি দেখাতে চাই যে, সিকল সেল অসুখে ভোগা মানেই আপনার স্বপ্ন সাকার হবে না, এমনটা নয়।

পৃথিবীর কাছে আমার বার্তা
এখন, অনেক বছর পর, আমি বুঝতে পেরেছি যে, সমস্যা থাকতে পারে, কিন্তু আমি আমার জীবনে হেরে না যেতে শিখেছি। আমি বিশ্বাস করি, আমরা যদি পড়েও যাই, আমরা আবার উঠে দাঁড়িয়ে চলতে থাকব। লড়তে থাকুন, কখনও হেরে যাবেন না, এবং এতে কাজ হবে। কিন্তু আপনাকে লড়াই জারি রাখতে হবে এবং আশাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আমি একটা প্রভাব ফেলতে চাই। যদি আমি করতে পারি, তাহলে আপনিও পারবেন। শুধুমাত্র হাসতে থাকুন।

ডেম্বার কাহিনি
32
প্যারিস
ফ্রান্স
আমি কে?
আমার নাম ডেম্বা, আমি ফ্রান্সে জন্মেছিলাম। আমি প্যারিসে থাকি এবং গ্র্যান্ডে এপিসেরিএ দে প্যারিসে একজন সহযোগী হিসেবে কাজ করি, যেটা আমার খুব ভাল লাগে। এই বিল্ডিঙটা খুব সুন্দর এবং কাজের জায়গা হিসেবে চমৎকার—এখানে আমি উদ্দেশ্য খুঁজে পাই। আমার 32 বছর বয়স, আমার সিকল সেল অসুখ আছে, কিন্তু সেটার জন্য আমি হেরে যাই না।
আমার সিকল সেলের কাহিনি
আমার 6 মাস বয়সে সিকল সেল অসুখ ধরা পড়েছিল। সিকল সেলের জন্য আমার খুব বেদনা হত এবং সেরে ওঠার জন্য আমাকে অনেক সময় হাসপাতালে থাকতে হত। আমার অসুখের কারণে আমার অনেকগুলো বড়সড় সার্জারি হয়েছে। আমার পিত্তকোষের অপারেশন হয়েছে। আমার মাত্র 4 বছর বয়সে আমার প্লীহা বাদ দিতে হয়েছিল। 2007 সালে, আমার হৃদপিণ্ডে 2 খানা বড় অপারেশন হয়েছিল। আমার যন্ত্রণাদায়ক ব্যাথার বর্ণনা দেওয়ার একমাত্র উপায় হল যে, এটা মাংসপেশির খিঁচুনির মতো হয়, কিন্তু সেটা প্রায় 10 বা 100 গুণ বা তারও বেশি। এখান থেকে আপনি ভালভাবে আন্দাজ করতে পারবেন সিকল সেলের রোগীকে কেমন তীব্র যন্ত্রণা ভুগতে ও কাটিয়ে উঠতে হয়। এটা আপনার সব কল্পনার বাইরে, এটা অবর্ণনীয়।

আমার পরিবার
আমার পরিবার খুব বড়, আমার 12 জন ভাই-বোন আছে। আমার নিজের দুই ভাই-বোন ও দুই সৎ ভাই-বোনের সিকল সেল অসুখ আছে। আমার ছোটো ভাই ও আমি সিকল সেলের বেদনায় ভুগি। একইসঙ্গে একইসময়ে এতগুলো সন্তানের যন্ত্রণা হওয়ায় ও একসঙ্গে হাসপাতালে থাকায় আমাদের বাবা-মায়ের জন্য খুবই ধকল হয়। আমি নিজেকে বলি সবকিছুর কোনও কারণ নিশ্চয়ই আছে। ঈশ্বরের প্রতি আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এবং পরিবার ও বন্ধুদের ভালবাসা ও যত্নের জন্য আমি উৎসাহ পাই।

আমার লক্ষ্য
আমার নিজের শারীরিক ও মানসিক সংগ্রাম সত্ত্বেও, আমি নিজের কাজ সর্বশক্তি দিয়ে করতে চেষ্টা করি ও ভাইয়েরা অসুস্থ হলে তাদের দেখভালের জন্য পরিবারকে সহায়তা করি। সিকল সেল অসুখে আক্রান্ত শিশুরা যখন হাসপাতালে তাদের ব্যথাবেদনা নিয়ে থাকে, তখন আমি তাদের সঙ্গেও দেখা করতে যাই। আমার নিজের মনের কথা তাদের জানিয়ে আমি উপদেষ্টা ও বন্ধু হিসেবে কাজ করতে চাই। তাদের সঙ্গে দেখা করার সময়, আমি ঠিকঠাক বলতে পারি তারা কেমন অনুভব করছে, তাদের চোখে আমি নিজের কষ্ট দেখতে পাই। তারা কীভাবে কাটাচ্ছে ও তার ফলে তাদের মানসিক প্রভাব কি হচ্ছে, সেসব আমি ঠিক করে শুনি ও বুঝতে পারি। আমরা একে অপরকে বুঝি। আমি তাদের বলি যে, যখন তারা পড়ে যাবে, তখন আবার তাদের উঠে দাঁড়িয়ে লড়তে হবে। যখন আপনি ঘটনাক্রমে চালিকাশক্তি পাবেন, তখন আশার সঞ্চার হবে, তার ফলে বেঁচে থাকার, টিকে থাকার, অসুখের সঙ্গে লড়াই করার জন্য আরও বেশি শক্তি আপনি পাবেন। এতে আপনার অসুখের থেকে আপনি অনেক বেশি দৃঢ় হয়ে উঠবেন। এখন তারা অসুস্থ আছে, তার মানে এই নয় যে, আগামী দিনে তারা সুখী, সফল জীবন বাঁচার জন্য আশায়, স্বপ্নে, ও সম্ভাবনায় থাকবে না।

পৃথিবীর কাছে আমার বার্তা
রোগীদের ও তাদের বাবা-মায়েদের জানানো দরকার যে, এই লড়াইয়ে তাঁরা একলা নন। তাঁদের একসঙ্গে যোগ দিতে হবে, এবং সেইভাবে একটা বড় পরিবার গঠন করতে হবে। কারও কখনও একলা থাকা উচিৎ নয়। আমি বিশ্বাস করি আমরা একসঙ্গে ভাল কাজ করতে পারব ও কাউকেই পিছনে ফেলে রাখব না। আমি বিশ্বাস করি সিকল সেলের মানুষজন সকলে মিলে একটা বড় পরিবার হয়ে উঠে একে অপরকে সহায়তা করবেন।

লায়েটিটিয়ার কাহিনি
28
প্যারিস
ফ্রান্স
আমি কে?
আমার নাম লায়েটিশিয়া, আমার 28 বছর বয়স। আমি প্যারিসে থাকি, কিন্তু জন্মেছিলাম মারটিনিকে। আমি একজন উদ্যোগকারী। আমার সিকল সেল অসুখ আছে, কিন্তু নিজের প্রতি বিশ্বাস রেখে ও উদ্যম নিয়ে আমি সেটাকে কাটিয়ে উঠতে পারছি।
আমার সিকল সেলের কাহিনি
আমার 10 বছর বয়সে আমার সিকল সেল অসুখের তীব্র ব্যথা শুরু হয়েছিল। আমার মা আমাদের সবকিছু বিক্রি করে দিয়েছিলেন, যাতে আমার চিকিৎসার জন্য আমাদের পরিবার মারটিনিক থেকে ফ্রান্সে চলে আসতে পারে। আমার 12 বছর বয়সে আমার অ্যাভাস্কুলার নেক্রোসিস হয়েছিল, এটা সিকল সেল অসুখের জন্য হাড়ের গুরুতর একপ্রকার সমস্যা। আমার ডান নিতম্বে সার্জারি করে প্রস্থেসিস বসানো হয়েছিল। তার ফলে, আমি আর হাঁটতে পারি না। এটা খুব কঠিন ছিল, কারণ সেইসময়ে আমি বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে যেতে বা সিনেমায় যেতে চাইতাম, অথচ পারতাম না। স্কুলে খেলার সময়ে সকলে খেলত বা ছুটোছুটি করত, কিন্তু আমি পারতাম না। আমার মনে হত আমি পিছনে পড়ে গেছি, কারণ আমি ইন্টার্নশিপের মতো স্কুলের অন্যান্য কাজকর্মেও অংশ নিতে পারতাম না। আমি হতভম্ব থাকতাম, দমে গেছিলাম, নিজেকে মূল্যহীন মনে হত—মনে হত আমার দ্বারা কিছু হবে না।

আমার সংগ্রাম
আমার মা আমাকে বলেছিলেন আমাকে আবার একটু একটু করে হাঁটতে হবে, আমি শুরু করেছিলাম। আমি যখন বারবার পড়ে যেতাম, নিজেকে আবার তুলে দাঁড় করাতাম। টেবিল, চেয়ার, এমনকি আমার ভাই-বোনদের ধরে আমি নিজের ভারসাম্য রাখতাম। এক বছর কঠোর শ্রমের পর আমি হাঁটতে শুরু করেছিলাম, কিন্তু তখনও আমার নিতম্বে মারাত্মক যন্ত্রণা করত। আমি অনেকবার হাসপাতালে থেকেছিলাম। অনেক নার্সের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল, যারা আমাকে আমার যন্ত্রণা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করেছিলেন। তাঁদের কারণে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমি একজন নার্স হব, এবং আমার মা আমাকে সমর্থন করেছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত, আমার নিতম্বের ব্যথা ও বারবার বেদনার কারণে, স্বাস্থ্যসুরক্ষায় আমার পেশা ছাড়তে হয়েছিল। মোটামুটি 2 থেকে 3 মাস পরপর আমাকে হাসপাতালে যেতে হয়। ঠাণ্ডায় আমার ব্যথাবেদনা বেড়ে যায়। মানসিক ধকল, খেলাধুলো, বা ভ্রমণেও সেটা হয়। আমি সহজে প্লেনে যাতায়াত করতে পারি না, এবং যদি আমি ঠিকঠাক খাবার না খাই বা যদি খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ি, তাহলে আমার ব্যথাবেদনা শুরু হয়।

আমার উদ্যোগের পেশা
আমাকে মানিয়ে নিয়ে আবার আরম্ভ করতে হয়েছিল। এখন আমি একজন উদ্যোগকারী এবং একটা অ্যাপ আরম্ভ করেছি, যেটা বিশ্বব্যাপী সিকল সেল রোগাক্রান্তদের সংযুক্ত করে। 2 বছর পর, আমার তৈরি করা অনলাইন কমিউনিটিতে 35টি দেশের 2600 জন ইউজার আছেন, এবং সেটা ক্রমশ বাড়ছে।

পৃথিবীর কাছে আমার বার্তা
আমি সকলকে জানাতে চাই যে, সিকল সেল অসুখ কেবলমাত্র কৃষ্ণাঙ্গদের হয় না, এটা শ্বেতাঙ্গদেরও হয়। যেকোনও মানুষের সিকল সেল অসুখ হতে পারে—এটা একটা লটারির মতো, কারণ এটা জিনগত অসুখ। আমি মনে করি, সিকল সেল রোগাক্রান্তদের নিজেদের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনা উচিৎ। নিরাশ হয়ে গেলে কেমন লাগে সেই অভিজ্ঞতা আমার নিজের হয়েছে। আপনাকে সবসময় এগিয়ে যেতে হবে, কারণ যদি আমরা মনে করি তাহলে আমরা সবকিছুই করতে পারি।

জুনের কাহিনি
36
লন্ডন
ইউনাইটেড কিংডম
আমি কে?
আমার নাম জুন, আমার 36 বছর বয়স। আমি লন্ডনে থাকি এবং এনএইচএস কমিশনিং-এ কাজ করি। আমি দক্ষিণ লন্ডনে জন্মেছিলাম। যদিও, আমার বাবা-মা ইউকে থেকে নাইজেরিয়ায় চলে আসার জন্য আমি নাইজেরিয়ায় বড় হয়েছিলাম। তরুণ বয়সে আমি ইউকে-তে ফিরে আসি এবং তখন থেকে লন্ডনে থাকি। আমার সিকল সেল অসুখ আছে, কিন্তু সেটা আমাকে আমার “মাউন্ট এভারেস্ট” জয় করতে বাধা দিতে পারেনি।
আমার সিকল সেলের কাহিনি
একসময় চিকিৎসকেরা বলেছিলেন আমি হয়ত আমার 18তম জন্মদিন দেখতে পারব না। আমি তাঁদের ভুল প্রমাণিত করেছি, কিন্তু আমাকে 36 বছর ধরে অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে। কল্পনা করুন, আপনার বুকের মাঝখানে কেউ হাতুড়ি পিটছে। লাগাতার। একবারও না থেমে। এটা সাংঘাতিক। সিকল সেল সংক্রান্ত গুরুতর সমস্যার সঙ্গেও আমাকে যুঝতে হয়, যেমন সিকল রেটিনোপ্যাথি যেটা আমার চোখের ক্ষতি করেছে, বুকের তীব্র উপসর্গ যা আমার ফুসফুসের ক্ষতি করছে, এবং অ্যাভাস্কুলার নেক্রোসিসের জন্য আমাকে শীঘ্রই নিতম্ব প্রতিস্থাপন করতে হবে। মাঝেমাঝেই আমি অবসন্ন হয়ে পড়ি এবং অনেকবার আমাকে হঠাৎ হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। আমার খুবই স্কুল কামাই হত এবং আমাকে হাসপাতালে শুয়ে বা বাড়িতে থেকে স্কুলের কাজকর্ম করতে হত।
হাসপাতালে দীর্ঘ জীবন কাটানোর ফলে আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। এতে শারীরিক খেলাধুলো ও স্কুলের কাজকর্ম সমেত দৈনন্দিন কাজকর্ম করা কঠিন হতে পারে। আমার জীবিকা, সম্পর্ক, থাকার অবস্থা, এবং ভ্রমণের সুযোগও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পূর্ণভাবে বাঁচতে না পারার জন্য আমার চিন্তা হয়। যদিও, আমি আমার জীবনে অনেক কিছু অর্জন করেছি, যেগুলো আমার জীবনে সদর্থক প্রভাব ফেলেছে ও আমাকে আশা জুগিয়েছে। আমার স্নেহশীল পরিবার ও একজন সঙ্গী আমাকে অনেক সহায়তা করেন, আমি 3 খানা ডিগ্রি পেয়েছি, এনএইচএস-এ চমৎকার কাজ করছি, 41টা দেশ ঘুরেছি, একটা বই প্রকাশিত হয়েছে, এবং আমি লন্ডনে সিকল সেল আক্রান্ত শিশু ও তরুণ-তরুণীদের পরামর্শ দিই। আমার বলতে ভাল লাগছে যে, ইউকে-তে সিকল সেল নিয়ে বেঁচে থাকা একজন অনুপ্রেরণা দায়ী মানুষের জন্য সিকল সেল সোসাইটি থেকে 2017 সালে আমাকে ফ্লোয়েলা বেঞ্জামিন লাইফ অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল।
নাইজেরিয়ায় আমার অভিজ্ঞতা
এই অসুখ সম্বন্ধে সচেতনতার অভাবে নাইজেরিয়ায় থাকা খুব কষ্টসাধ্য ছিল। নির্দিষ্ট কিছু নাইজেরীয় প্রথায় বা মানুষের মধ্যে এমন কলঙ্কের বোধ ছিল যে, কোনও শিশু সিকল সেল নিয়ে জন্মালে তাঁরা তাকে “বাতিল” করতে পারতেন, কারণ তাঁরা বিশ্বাস করতেন এরা তাড়াতাড়ি মারা যাবে। সিকল সেলের সঙ্গে যুক্ত অপমান ও বৈষম্যের জন্য কখনও কখনও মানুষ সেটা স্বীকার করতে লজ্জা পেতেন। বহু নাইজেরীয় শিশুদের, বিশেষত যারা গ্রামাঞ্চলের, সিকল সেল অসুখের পরীক্ষা করানো হয় না এবং তারা কখনও জানতে পারে না এই অসুখটা তাদের আছে, ফলে অনেক কম বয়সে তাদের মৃত্যু হয়। নাইজেরিয়াতে স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিখরচায় হয় না, ফলে গরীব মানুষেরা স্বাস্থ্যসুরক্ষার খরচ যোগাতে পারেন না এবং প্রবল কষ্টে থাকতে হয়। আমি সৌভাগ্যশালী ছিলাম বলে সুরক্ষা নিতে পারতাম।
আমার শীর্ষে আরোহণ
আমি সবসময় আমার অসুখের ব্যথার থেকে বড় কিছু অর্জন করতে চেয়েছিলাম। 2017-এর অক্টোবরে, আমি ছুটি কাটাতে শ্রীলঙ্কায় গিয়েছিলাম। সিগিরিয়াতে একটা বিখ্যাত পাহাড় আছে, সেটা 180 মিটার উঁচু। পরিণাম ও সমস্যা জানা সত্ত্বেও, আমি সেই পাহাড়ে ওঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমার সঙ্গীর সহায়তায় ও উৎসাহে, আমি সেটা পেরেছিলাম! স্বাভাবিক মানুষদের জন্য সেটা একটা ছোটো পাহাড় বটে, কিন্তু আমার জন্য সেটা একটা পর্বত ছিল। আমার কাছে সেটাই মাউন্ট এভারেস্ট।

পৃথিবীর কাছে আমার বার্তা
আমি চাই এই সমস্যার গভীরতা সকলে বুঝুন, এই সমস্যায় আক্রান্ত মানুষদের আরও সহায়তা করুন—আপনি উচ্চস্তরের নির্ধারণ, প্রশাসন, গবেষণা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা, পরিবার, শিক্ষা, পেশাগত বিভাগ, জনসম্প্রদায় বা স্বতন্ত্র ব্যক্তি, যা-ই হন।

ইম্যানুয়েলের কাহিনি
41
ক্রয়ডন
ইউনাইটেড কিংডম
আমি কে?
আমার নাম ইম্যানুয়েল, আমার বয়স 41 বছর। আমি ইউনাইটেড কিংডমে বড় হয়েছি এবং ক্রয়ডনে একজন পার্সোনাল ট্রেইনার হিসেবে কাজ করি। আমার সিকল সেল অসুখ আছে এবং সেটা আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আমার ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আমি উদ্যমী ও আশাবাদী থাকার জন্য শক্তি খুঁজতে চেষ্টা করি, যাতে অন্যান্য সিকল সেল আক্রান্তদের এইরকম থাকতে উৎসাহ দিতে পারি।
আমার সিকল সেলের কাহিনি
সিকল সেল অসুখ আমাকে শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, আমার কাঁধ, পা, ও বুক সমেত আমার গাঁটে ভীষণ যন্ত্রণা হয়। আমার কাঁধে 2 খানা অপারেশন হওয়ার অপেক্ষা করছি। সিকল সেল অসুখের জন্য আমি আমার বাঁ চোখের দৃষ্টিও হারিয়েছি। আমার 11 বছর বয়সে, আমার হৃদপিণ্ড বন্ধ হয়ে একটা স্ট্রোক হওয়ার ফলে প্রায় মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলাম। আমাকে দ্রুত আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং আমার মনে আছে আমি নিজেকে দেখছিলাম, যেভাবে পাখি ওপরদিক থেকে দেখে—শরীরের সাড় ছাড়া, কারণ সেইসময় আমার জ্ঞান ছিল না। আমার মনে হয় আমি কোনও কারণের জন্য বেঁচে গেছি—এই গ্রহে আমার কোনও উদ্দেশ্য আছে, এবং অন্যদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য আমার অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো দরকার। প্রায় 18 মাস আগে আমার সাম্প্রতিক ব্যথাবেদনা হয়েছিল এবং আমার ডান কাঁধে ভীষণ যন্ত্রণা করছিল।

আমার সংগ্রাম
আমার নিজের জীবনে সিকল সেল সংক্রান্ত অপমান পেয়েছি। আমার সম্পর্কে সমস্যা হয়েছিল, কারণ আমার সঙ্গী আমার অসুখকে খুব দায়ভার ভেবেছিল। আমার এক প্রাক্তন সঙ্গী আমাকে বলেছিল আমার অবস্থা খুবই ধকল-দায়ক, এবং আমি অক্ষম, তাই এটা জীবনের জন্য ভাল পছন্দ হবে না, এই কথাগুলো মানসিকভাবে আমাকে আঘাত করেছিল। তাছাড়া, অপমানের কারণে, আমার অসহনীয় যন্ত্রণার সময়ে আমার চিকিৎসা করানো হয়নি। মাঝেমাঝে চিকিৎসকেরা আমাকে আমার ব্যথার ওষুধপত্র দেননি, ভাবতেন আমাকে শারীরিকভাবে সিকল সেল রোগীদের মতো দেখতে নয়, কারণ আমি “খুবই ফিট” ছিলাম। কয়েকটা হাসপাতালে আমাকে ড্রাগ সন্ধানী বলেও ছাপ মেরেছিল।

আমার অ্যাথলেটিক জীবন
আমার জন্য আমার সাধ্য মতো ফিট থাকা খুবই জরুরী। বাচ্চা বয়সে আমাকে বলা হয়েছিল আমি খুব দুর্বল এবং তাই আমি খেলাধুলো বা ধকল নেওয়ার কাজকর্ম করব না বা ঠাণ্ডায় বাইরে বেরবো না। যদিও আমি অন্যদের মতো হতে চাইতাম, তাদের থেকে ভাল না হলেও, আমি রাগবি, ফুটবল, বা অ্যাথলেটিক্স খেলতে চাইতাম। আত্মবিশ্বাস গঠনের জন্য 18 বছর বয়সে আমি শরীরচর্চা শুরু করেছিলাম। কঠিন সময়ে অন্য রোগীদের উৎসাহ দিয়ে আমি নিজের আশা বাঁচিয়ে রাখি। আমি জানি না কেন আমার সিকল সেল হয়েছে এবং কেন এইগুলো আমার হবে, কিন্তু যদি এগুলো অন্যদের উৎসাহ দেওয়ার বা শেখানোর জন্য আমি কাজে লাগাই, তাহলে অভিশাপের বদলে হয়ত এটা একটা আশীর্বাদ হয়ে উঠবে। আমি সবসময় সিকল সেলকে দায়ভার হিসেবে না ভেবে উপহার হিসেবে ভেবেছি। আমি বক্সিং, দড়ি টানাটানি খেলা, ও বল গেমের মতো শারীরিক কসরতের সময় শিশুদের উপদেশ, পরামর্শ, ও দিশা দেখাতে চেষ্টা করি। এটা আমার সারা সপ্তাহের মধ্যে সেরা কাজ হয়। এতে আমি নিজেকে তরুণ ও উদ্দীপ্ত বোধ করি। এটা সত্যিই আমার প্রতি একটা আশীর্বাদ। আমি তাদের পরামর্শ দিতে চাই, যাতে তারা শিখতে পারে এবং লন্ডনে আমার বেড়ে ওঠার সময়ে যে ভুলগুলো আমি করেছিলাম সেগুলো না করে।

পৃথিবীর কাছে আমার বার্তা
আমি চাই সিকল সেলের অসুখ আরও মান্যতা প্রাপ্ত হোক, যাতে রোগীদের হয়রান হতে না হয় এবং তাঁদের অপরাধী বা ড্রাগ সন্ধানী হিসেবে ভাবা না হয়। আমি চাই আমার বন্ধু সিকল সেল রোগীরা জানুন যে, তাঁরা একলা ভুগছেন না এবং আমিও তাঁদের বেদনা অনুভব করি। আমি তাঁদের জানাতে চাই যে, বর্তমানে যে বেদনা তাঁরা অনুভব করছেন সেটি রক্তমাংসের, এবং এই লড়াইয়ের চ্যালেঞ্জটা খুব সম্ভবত একটি মানসিক পরীক্ষা। আপনার মন সাহসী, দৃঢ়, ধৈর্যশীল, ও নমনীয় রয়েছে, এবং এতদূর পর্যন্ত পৌঁছনোর জন্য আপনি উদ্যমী হয়ে সংকল্প রেখেছিলেন। সবশেষে এসবের অর্থ পরিষ্কার হয়ে যাবে। বিশেষ কোনও কিছুর জন্য আপনাকে তৈরি করা হচ্ছে এবং ঈশ্বরের নির্ধারিত সময়ে সবকিছু প্রকাশিত হবে।

আহমেদের কাহিনি
28
মানামা
বাহারিন
আমি কে?
আমার নাম আহমেদ। আমার বয়স 28 বছর, আমি বাহারিনের মানামাতে থাকি। আমার সিকল সেল অসুখ আছে। আমার এক বোনের এই লক্ষণ আছে এবং এক বড়ভাইয়ের সিকল সেল অসুখ নেই। যদিও আমি এই অসুখ নিয়ে বেঁচে আছি, তবুও আমি সুন্দর শিল্পকলা তৈরি করার উপায় বের করি, যা আমাকে আমার জীবনে স্থির ও নিয়ন্ত্রিত রাখে।
আমার সিকল সেলের কাহিনি
আমার 5 বছর বয়সে প্রথমবার ব্যথাবেদনা হয়েছিল। মাঝেমাঝে সিকল সেল অসুখে আমার ব্যথা দেহের একটা অংশে থাকে। প্রত্যেকবার আমার পা ফুলে যায়, ভীষণ ব্যথা করে এবং হাঁটার জন্য আমাকে ক্রাচ নিতে হয়। যন্ত্রণাটা মারাত্মক হয়। মনে হয়, আমাকে বারবার হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হচ্ছে। আমি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করতাম এবং কয়েক বছর পর সেই পেশা আমি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলাম। সিকল সেল অসুখ নিয়ে বেঁচে থেকে কাজ করা আমার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছিল। আমার হাতে, পায়ে, ও হাঁটুতে ব্যথা করে বলে আমি বেশিক্ষণ ডেস্কে বসতে পারি না। আমি বিশ্বাস করি, সিকল সেল অসুখ যতটা শারীরিক ঠিক ততটাই মানসিক ও সামাজিক অসুখ। এটা শুধুমাত্র শারীরিক যন্ত্রণা নয়; এটা একটা মানসিক অত্যাচার। এটা আপনাকে সামাজিকভাবে বহিষ্কৃত করে। এটা আপনাকে শারীরিকভাবে আঘাত করে, কিন্তু মানসিকভাবে অত্যাচার করে।

আমার শিল্পকলা ও ধ্যান
এখন আমি একজন ফ্রিল্যান্স শিল্পী হিসেবে কাজ করি। আমি সারা জীবন এই যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচেছি এবং অনুভব করেছি একমাত্র আমার শিল্পকর্মই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। আমি বুঝতে পেরেছি যে, ছবি আঁকাটা আমার জন্য যেকোনও চিকিৎসার মতোই ভাল। অভিযোগ জানানো, ছেড়ে দেওয়া, বা কিছু না করার বদলে আমি আমার যন্ত্রণাকে সুন্দর শিল্পকর্মে ব্যবহার করেছি। এটা খুব ভাল চিকিৎসা করে এবং আমাকে ভুলিয়ে রাখার জন্য দারুণ কাজ করে। কোনও কিছু বানানোর প্রতি মনোযোগ দিলে, সেটা আমাকে ব্যথা থেকে দূরের পৃথিবীতে নিয়ে যায়। আমি যন্ত্রণায় অভ্যস্ত হয়ে গেছি এবং দীর্ঘ সময় আমার বিছানায় শুয়ে থাকি। বিছানায় পড়ে থাকার সময়টা আমি ধ্যান করার কাজে লাগাই। এতে সিকল সেল অসুখ সংক্রান্ত খারাপ ভাবনাগুলো আমার মন থেকে মুছে যায় এবং আমার সৃষ্টিশীল কাজের জন্য আমার মনে জায়গা তৈরি হয়। এটা কাদার তাল নিয়ে একটা সুন্দর মূর্তি গড়ার মতো। এতে আমি শান্তি পাই।

অবসাদের সঙ্গে আমার যুদ্ধ
আমি অবসাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছি। আমি এখন হাসতে পারি, কিন্তু যখন আমি লড়াই করাটা কঠিন ভেবেছিলাম তখন আমার জীবনের খুব অন্ধকার, খারাপ সময় কেটেছিল। যন্ত্রণাটা যখন অসহনীয় হয়ে যায়, আমি বাইরে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা করতে পারি না। সেটা খুবই একাকীত্বের বিষয়। জীবনের উজ্জ্বল দিকটা দেখতে পাওয়া কঠিন। শিল্প অবশ্যই সহায়তা করে, কারণ সেটা আমার অবসাদ কাটিয়ে দেয়।

পৃথিবীর কাছে আমার বার্তা
আমি আশা করি, সিকল সেল রোগাক্রান্ত সকলে তাঁদের নিজস্ব প্রতিভা খুঁজে পাবেন। সেটা অনুশীলন করে আপন করে তুলুন, তাহলে আপনি কখনও অবসাদে ভুগবেন না। এতে আপনি যন্ত্রণা কাটিয়ে উঠতে পারবেন। সিকল সেল অসুখের যন্ত্রণা নিয়ে আমার বাঁচা অদৃষ্টপূর্ব ও এলোমেলো হতে পারে, কিন্তু আমার মনে হয় শিল্পকলা বানিয়ে আমি নিজেকে শান্ত ও নিয়ন্ত্রিত রাখতে পারি। এটা আমাকে নিয়ন্ত্রণের অনুভূতি দেয়। মনে হয়, এই ক্যানভাসের মতো সুন্দর জমিটা আমি তৈরি করেছি, এবং সেখানে প্রাণ সৃষ্টি করছি।

মানাহিলের কাহিনি
36
এ’আলি, মানামা
বাহারিন
আমি কে?
আমার নাম মানাহিল, আমার বয়স 36 বছর। আমি বাহারিনের রাজধানী মানামাতে জন্মেছিলাম ও বড় হয়েছিলাম, যেখানে আমার সিকল সেল অসুখ ধরা পড়েছিল। আমার অসুখের কারণে, এখন আমার ডান হাতের ব্যবহার সীমিত হয়ে গেছে, কিন্তু সেইজন্য আমি থেমে যাইনি। কঠোর শ্রম, আত্মবিশ্বাস, অঙ্গীকার, সংকল্প, এবং আশাবাদী মন নিয়ে আমি অনেক কিছু অর্জন করতে পারি। আমি আমার ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে ভালবাসা, উচ্চাশা, ও দারুণ আশা ছাড়া অন্য কিছুই দেখি না।
আমার সিকল সেলের কাহিনি
আমার 1 মাস বয়সে, চিকিৎসক আমার মাকে বলেছিলেন যে, আমি অসুস্থতা-প্রবণ এবং তাই তিনি যেন আমার মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকেন। আমার জীবনের কঠিনতম সময় ছিল আমার শৈশব। আমার মনে হয় আমার কোনও শৈশবই ছিল না। আমি হাসপাতালে বড় হয়েছিলাম এবং আমাকে রক্ষা করার জন্য সবকিছুই নিষিদ্ধ ছিল: “হাঁটবে না, খেলবে না, মিষ্টি খাবে না, এটা করবে না, ওটা করবে না”। আমি আমার কাঁধে হাড়ের ব্যথায় ও আমার চোখে রেটিনার ক্ষয়ের জন্য ভুগি। সিকল সেল অসুখের জন্য আমার যন্ত্রণা অবিরত হয়। যন্ত্রণা ও যন্ত্রণা ও আরও যন্ত্রণা। এটা কখনও শেষ হয় না। 2002 সালে আমার বোনের বিয়ের পার্টির জন্য যখন আমি তৈরি হচ্ছিলাম, তখন আমার সবথেকে খারাপ ব্যথাবেদনা শুরু হয়। হঠাৎ আমার বাঁ হাতে যন্ত্রণা শুরু হয় এবং আধ ঘণ্টা পর আমার কনুই ফুলতে শুরু করে। সেটা থামছিল না। আমার সারা শরীরে সেটা ছড়িয়ে পড়ছিল। 3 ঘণ্টা পর, আমার পরিবার অ্যাম্বুলেন্স ডেকেছিল, কারণ আমি দুর্বল হয়ে নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। আমি ভীষণ ভয় পেয়েছিলাম। আমি 2 সপ্তাহ যাবত ইন্টেন্সিভ কেয়ারে ছিলাম। 1 মাস পর, শেষমেশ আমি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাই। আমি সৌভাগ্যশালী যে, আমি বেঁচে রয়েছি।

আমার বোন
আমার বোন আজহারেরও সিকল সেল অসুখ ছিল, কিন্তু একবার গুরুতর ব্যথাবেদনায় ভোগার পর দুঃখজনকভাবে সে মারা যায়। আমি খুব ভেঙে পড়েছিলাম, কারণ আমরা খুব ঘনিষ্ঠ ছিলাম। তার স্মৃতির প্রতি উৎসর্গ করে আমি আমার ওয়ারড্রোবে তার দেওয়া গয়না রেখে দিয়েছি, এবং আমার বাড়িতে ফুল রেখেছি, কারণ তার নামের অর্থ ফুল।

আমার স্বপ্নের কাজ ও বাড়ি
আমার শিক্ষক-শিক্ষিকারা আমাকে বলেছিলেন যে, আমার করতে চাওয়া কোনও কাজ আমি পারব না, কারণ আমার সিকল সেল অসুখ আছে এবং আমার শুধু বাড়িতে থাকা উচিৎ। আমি তাঁদের কথা না শোনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, কারণ আপনাকে অবশ্যই আপনার স্বপ্নের পিছনে ছুটতে হবে। আমার স্বপ্ন ছিল একজন ইঞ্জিনিয়ার হওয়া এবং আমার ও আমার পরিবারের জন্য একটা বাড়ি তৈরি করা—এবং ঠিক সেটাই আমি করেছি! আমি চেষ্টা চালিয়ে যেতে ও সফল হতে পেরেছি। 7 বছরের কঠোর শ্রম, মনোযোগ, সংকল্প, ও আর্থিক কষ্টের পর আমি আমার ইউনিভার্সিটির ডিগ্রি পেয়েছি। আমি মাঝেমাঝেই শুনতাম আমার বাবা-মা বলাবলি করতেন যে, যদি তাঁরা তাঁদের নিজেদের বাড়ি বানাতে পারতেন। তাঁদের স্বপ্ন বড় হয়ে উঠেছিল, কিন্তু আসল বাধা ছিল টাকাপয়সা। আমি ইউনিভার্সিটি থেকে গ্র্যাজুয়েট হয়ে নিজে নিজেকে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে, আমি তাঁদের স্বপ্ন সাকার করব। আমাকে এক দিকের জন্য আড়াই ঘণ্টা গাড়ি চালাতে হত, সৌদি আরবের মরুভূমির মাঝখান দিয়ে, কিন্তু আমি আমার বাবা-মায়ের স্বপ্নের বাড়ি বানানোর জন্য, নকশা করার জন্য সঞ্চয় করতে সমর্থ হয়েছিলাম। এমনকি বাড়ির মধ্যের অধিকাংশ সরঞ্জাম আমি হাতেই বানিয়েছিলাম। স্কুলে আপনার শিক্ষক-শিক্ষিকার কথা শোনা ছাড়া অন্য উপায় থাকে না। আপনার মনে হয় তাঁরা যা বলছেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু আমি আমার শিক্ষক-শিক্ষিকার কথা ভুল প্রমাণ করেছিলাম এবং আমি যা করতে সমর্থ ঠিক সেটাই করে তাঁকে দেখিয়েছিলাম। আমি এখানেই থামব না। আমি পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার, আমার পেশা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার, এবং আমার পরিবারের জন্য একটা আলাদা বাড়ি বানানোর পরিকল্পনা করছি।

পৃথিবীর কাছে আমার বার্তা
অন্যান্য কমবয়সী রোগীদের জন্য আমার একটা বার্তা আছে। সবসময় আপনার জীবন উপভোগ করতে মনে রাখবেন। আপনার স্বপ্নকে কোনও কিছু দমাতে পারে না। আপনার কাছে রঙ-তুলি আছে, আপনার জীবনকে রাঙিয়ে তুলুন। মানাহিল করতে পেরেছে, আপনিও পারবেন! কখনও ভুলবেন না যে, আপনি একজন স্টার।

জাকারিয়ার কাহিনি
45
মানামা
বাহারিন
আমি কে?
আমার নাম জাকারিয়া, আমি সিকল সেল অসুখ নিয়ে বেঁচে আছি। আমি কেবল সিকল সেল রোগাক্রান্ত নই, বরং আমি বাহারিন সোসাইটি ফর সিকল সেল অ্যানিমিয়া পেশেন্ট কেয়ারের চেয়ারম্যানও বটে। সিকল সেলের জন্য আমি কমই খুইয়েছি, বরং অনেক কিছু শিখেছি। আমি প্রাজ্ঞ হয়েছি। আমার মানবিকতা অর্জন করেছি। সিকল সেল অ্যানিমিয়া সাধারণ জিনিসপত্র নিয়েছে, কিন্তু আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে।
আমার সিকল সেলের কাহিনি
একইসময়ে আমার দুই নিতম্ব অপারেশন করে প্রতিস্থাপিত হয়েছিল, একইসময়ে দুই কাঁধে অপারেশন হয়েছিল, আমার মেরুদণ্ডের 7টা হাড় পুনরায় গঠিত হয়েছে, এবং আমার পিত্তথলি বাদ দেওয়া হয়েছে। 8 সপ্তাহ পরপর রক্ত নেওয়ার জন্য আমাকে হাসপাতালে যেতে হয়। সিকল সেল অসুখের জন্য 11 বার আমাকে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে। আইসিইউতে শেষবার থাকার সময়, আমি সত্যিই ভেবেছিলাম এটাই আমার জীবনের শেষ। আমি যখন ঢুকছিলাম, তখন আমার পরিবার, সহকর্মী, ও বন্ধুদের বিদায় জানিয়েছিলাম। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে, আমি আমার চিকিৎসকদের হতবুদ্ধি করে ফিরে এসেছিলাম। আমি আমার ঘরে সাদা আলোটা দেখেছিলাম, কিন্তু কোনওভাবে আমি জীবনে ফিরে আসার পথ খুঁজে পেয়েছিলাম। যখন আমি ছোটো ছিলাম, আমার পরিবারকে চিকিৎসকেরা বলেছিলেন সিকল সেল অসুখের জন্য আমি আমার কৈশোরের আগেই মারা যাব। তারপর, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর, আমাকে বলা হয়েছিল আমি সম্ভবত 42 বছর পর্যন্ত বাঁচব না। এখন আমার বয়স 45 বছর এবং আমি আমার পরিবারকে দেওয়া প্রতিজ্ঞা পালন করছি—আমি 75 বছর পর্যন্ত বাঁচব, কোনও দুঃখ ও যন্ত্রণা নিয়ে নয়, বরং ভালবাসা ও হাসির সঙ্গে।

আমার সংগ্রাম
আমার সংকল্প সত্ত্বেও, আমাকে কাজের সুযোগ ও পদোন্নতি হারানোর জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছে। আমার সিকল সেল অসুখের জন্য আমার কাজ করার মতো যোগ্য প্রশিক্ষণ আমাকে দেওয়া হয়নি। সিকল সেল আক্রান্তের কাজকর্ম ও সামর্থ্য সমাজ কেড়ে নিতে পারে। সিকল সেল অসুখকে ঘিরে একটা কলঙ্ক আছে, যেটা বিভিন্ন মানুষ বিভিন্নভাবে বজায় রাখেন। আমার অভিজ্ঞতায়, সিকল সেল আক্রান্তদের সবথেকে বেশি অপমান পেতে হয় হাসপাতালে। যখন আমি মাঝেমাঝে হাসপাতালে যেতাম, আমার ব্যথা সম্বন্ধে চিকিৎসকদের বোঝাতে হত। মাঝেমাঝে তাঁরা আমাকে ফেরত পাঠিয়ে দিতেন, কারণ তাঁরা ভাবতেন আমি একজন ড্রাগ সন্ধানী, যদিও সত্যিই আমার সহায়তার প্রয়োজন হত। আমাদের ব্যথাকে বিচার করার অধিকার কেউ তাঁদের দিয়েছেন। এই অপমানের জন্য আমার অনেক সহকর্মীদের আমি হারিয়েছি।

আমার জীবনের বৃক্ষ
বাহারিনে একটা আকর্ষণ আছে, যেটার নাম “জীবনের বৃক্ষ”, এটার একটা বিশেষ অর্থ আমার জীবনে আছে। এই বৃক্ষ 400 বছরের বেশি সময় ধরে মরুভূমিতে একলা দাঁড়িয়ে আছে, চূড়ান্ত গরমের মধ্যে জল ছাড়াই টিকে আছে ও সবলে বেড়ে উঠছে। আবহাওয়ার অবস্থা সত্ত্বেও এটা জীবনকে মানিয়ে নিয়ে টিকে থাকার লড়াই করছে। এই জীবনের বৃক্ষের মতোই আমি আমার সিকল সেল অসুখের অভিজ্ঞতাকে বোধ করি। অমরত্ব খোঁজার জন্য ও কখনও পড়ে না যাওয়ার জন্য—যোদ্ধা হয়ে ওঠার জন্য—আমি আমার জীবনের শিকড় প্রতিষ্ঠা করতে এই জীবনের বৃক্ষের কাছ থেকে শিখেছি। যারা সিকল সেল অসুখে ভুগছেন, তাঁদের সকলের জন্য এটা শেখা খুব দরকার। আমি ও জীবনের বৃক্ষ দুজনেই চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প কোনওভাবে খুঁজে নিয়েছি।

পৃথিবীর কাছে আমার বার্তা
বাহারিন সোসাইটি ফর সিকল সেল অ্যানিমিয়া পেশেন্ট কেয়ারের চেয়ারম্যান হিসেবে আমার পেশাগত ভূমিকায়, আমি হৃদয়ঙ্গম করেছি যে, নিজের নিজের স্বাস্থ্যের জন্য প্রত্যেকেই দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকেন। এনাদের শিখিয়ে, সহায়তা দিয়ে, এবং আশা ও ভালবাসা ছড়িয়ে কঠোর শ্রম করে আমরা একসঙ্গে এই জনসম্প্রদায়কে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আরও সবল ভিত্তি গড়ে তুলতে পারি। আমি আশা করি যে, সিকল সেল অ্যানিমিয়া নিয়ে বাহারিনে জন্মানো শেষ প্রজন্ম হব আমরাই। আমি আশা করি, বাহারিন জিনগত অসুখ মুক্ত রাষ্ট্র হয়ে উঠবে। পৃথিবী থেকে এই অসুখ মুছে ফেলার জন্য আমাদের অবশ্যই কাজ করতে হবে।

টিওনার কাহিনি
27
বাল্টিমোর
ইউএসএ
আমি কে?
আমি টিওনা, আমার বয়স 27 বছর। আমার সিকল সেল অসুখ ও সব গাঁটে অ্যাভাস্কুলার নেক্রোসিস আছে, ফলে 4 বার আমার নিতম্ব প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। যদিও সিকল সেল অসুখের সব জটিলতার মধ্যে দিয়ে আমি কাটিয়েছি, তবুও আমি অন্যান্য সিকল সেল আক্রান্তদের সহায়তা করতে ও পরিবর্তনকে স্থায়ী রূপ দিতে কখনও পিছপা হইনি।
আমার সিকল সেলের কাহিনি
সিকল সেল অসুখ নিয়ে বেড়ে ওঠা খুব কঠিন ছিল। আমি এক-একবার কয়েক মাস যাবত স্কুলে যেতে পারতাম না এবং এমনকি সিকল সেল বেদনার জন্য আমি আমার নাচগানের অনুষ্ঠান প্রমেও যেতে পারিনি। প্রথম ডেটের সময় ডেটিং সম্বন্ধে আমার মনোভাব ছিল যদি মানুষটা সিকল সেল অসুখটা কি সেটা না জানেন, এবং ঠিক তাই ঘটেছিল, তিনি চলে গিয়েছিলেন। এটা আখেরে কাজে লাগত না। আমার 2 বছর বয়সে প্রথমবার সিকল সেল অসুখের জটিলতা হয়েছিল। সেটা আমার শৈশবের গোড়ার দিকের অন্যতম অভিজ্ঞতা। ঠাণ্ডায় বাইরে যাওয়ার কথা ভাবলে আমি নার্ভাস হয়ে যেতাম, কারণ সেটা সিকল সেল ব্যথাবেদনা বাড়িয়ে তুলতে পারে। আমি সৌভাগ্যশালী যে, আমার কাছে পরিবারের বিশাল সহায়তা আছে। আমার ছোটোবেলায় শীতকালে আমার ঠাকুমা আমাকে বাইরে বরফের মধ্যে ভাইয়ের সঙ্গে খেলতে যেতে দিতেন না, কিন্তু তিনি বালতিতে তাজা বরফ ভরে বাড়িতে নিয়ে আসতেন যাতে আমি বরফের পুতুল বানাতে পারি। আমার ঠাকুমা চাইতেন সিকল সেল ছাড়া সব বাচ্চা যেমন আনন্দ করে, আমিও যেন সেগুলো করতে পারি, যাতে শৈশব নিয়ে আমার কোনও আফসোস না থাকে।

সিকল সেল প্রতিনিধি হিসেবে আমার সপক্ষে প্রচার
আমি একজন স্বাভাবিক দলনেতা এবং সিকল সেল জনসম্প্রদায়ের মধ্যে একজন সক্রিয় প্রচারকারী। বিশ্বব্যাপী সিকল সেল রোগাক্রান্তদের কাছ থেকে আমি বার্তা পাই, যাদের মধ্যে কয়েকজন সুদূর আফ্রিকায় থাকেন, যারা পরামর্শ, সহায়তা, ও সমর্থন পেতে চান। আমি এই জনসম্প্রদায়ের মধ্যে একজন নির্ভরযোগ্য হয়ে ওঠার জন্য গর্বিত অনুভব করি। এমনকি যখন আমি আমার অসুখের সঙ্গে লড়াই করি বা মানসিকভাবে যুঝতে থাকি, আমি সোজা দাঁড়াতে চেষ্টা করি ও সহায়তা প্রার্থী অন্যান্য সিকল সেল যোদ্ধাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিই না। আমাদের অবশ্যই একসঙ্গে থাকতে হবে।

আমার প্রেসিডেন্ট সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা
আমার জীবনের সবথেকে বড় ঘটনা হল ইউনাইটেড স্টেটসের প্রথম আফ্রিকান আমেরিকান ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার সঙ্গে সময় কাটাতে পারা। আমি যথেষ্ট সৌভাগ্যশালী, কারণ আমাকে 3টে পৃথক অনুষ্ঠানে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এমনকি মিশেল ওবামা আমাকে একটা চিঠি লিখেছিলেন। সেখানে বলা ছিল যে, তিনি ও প্রেসিডেন্ট আমাদের দেশের ভবিষ্যতের জন্য আমার আশা ও ভরসা সমর্থন করেন এবং আমার মতো সংযুক্ত নাগরিকদের একত্রে কাজ করার উপরে একটা দেশ রূপে আমাদের শক্তি নির্ভর করে। আগামী সময়ে আমার জনসম্প্রদায়কে পরিষেবা দানের জন্য নতুন নতুন উপায় বের করার জন্য তিনি আমাকে উৎসাহিত করেছিলেন।

পৃথিবীর কাছে আমার বার্তা
আমি বিশ্বাস করি, এখনও কেবলমাত্র আমেরিকায় আমাদের জনসম্প্রদায়ের মধ্যেই প্রচুর অসম্পূর্ণ চাহিদা আছে তা নয়, সেটা সারা পৃথিবীতেই আছে। আমাদের কাজ হল আমাদের কাহিনি প্রচার করা ও নিশ্চিতভাবে সকলকে জানানো। আমরা ছাপ রাখতে পারি। সম্প্রতি আমাদের একটা বিশাল আইনসম্মত জয় হয়েছে! আইন পরিবর্তনের জন্য লড়াই করা ও জিততে পারা ভীষণ উৎসাহিত করেছে। আমি আশা করি, আমার প্রচার কর্ম অন্যান্যদের নিজেদের সিকল সেলের কার্যকলাপে কঠোর শ্রম ও সংকল্প প্রদানে উৎসাহিত করবে।

টারটানিয়ার কাহিনি
39
নিউইয়র্ক
ইউএসএ
আমি কে?
আমার নাম টারটানিয়া, আমি পেইন ম্যানেজমেন্টে বিশেষজ্ঞ একজন পেশাদার চিকিৎসক। আমার জীবনের একটা বড় অংশ হল সিকল সেল অসুখ। আমি ও আমার ভাই সিকল সেল নিয়েই বেঁচে আছি।
আমার সিকল সেলের কাহিনি
আমি খুব অসুস্থ শিশু ছিলাম ও খুব স্কুল কামাই করতাম, কারণ আমি হাসপাতালে ছিলাম। আমার জীবনে সিকল সেল গুরুতর প্রভাব ফেলেছে। আমি যেভাবে বেড়ে উঠেছি, যাদের সঙ্গে মেলামেশা করেছি, এবং আমার পাওয়া লেখাপড়ার সুযোগ এইসবের উপর এটি ক্ষতি করেছে। বাড়ির লোকেরা আমার হোমওয়ার্ক হাসপাতালে নিয়ে আসতেন। আমার পড়াশোনার ব্যাপারে আমি আগে থেকেই কঠোর শ্রম করতাম, যাতে ব্যথাবেদনার সময়ে হাসপাতালে থাকতে হলে আমি পিছিয়ে না পড়ি।

আমার ভাইয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক
আমার পরিবারের সিকল সেলের ঘটনায় আমি একাই নই—আমার ভাই ক্রিস্টোফারের 4 বছর বয়সে সিকল সেল অসুখের জন্য স্ট্রোক হয়েছিল, যার ফলে সে অক্ষম হয়ে গেছে এবং হাঁটতে বা কথা বলতে পারে না। আমার মা ক্যানসারের কারণে মারা যাওয়ার পর আমার বাবা প্যাট্রিক ছিলেন ক্রিস্টোফারের একমাত্র যত্নকারী। এখনও ক্রিস্টোফারের বুদ্ধি ক্ষুরধার। যখন সে আমাদের সঙ্গে মেলামেশা করে, তখন তার ব্যক্তিত্বের ছাপ পাওয়া যায়। সে ভাল হয়ে ওঠার জন্য কঠোর শ্রম করছে, এবং সেটা উৎসাহিত করে! আমরা দুজনেই লড়াকু।

আমার চিকিৎসার সফর
আমার ভাইয়ের জটিলতা দেখে আমি ব্যথাবেদনা প্রশমনের ঔষধে চিকিৎসক হওয়ার জন্য উৎসাহ পেয়েছিলাম। আমি জানতাম এটা একটা দীর্ঘ, কঠিন পথ হতে চলেছে, কিন্তু আমি ছেড়ে দিইনি। সফল হওয়ার জন্য অসুখটা ছিল আমার অনুপ্রেরণা। আমি সিকল সেল অসুখ সহ একজন চিকিৎসক হতে চেয়েছিলাম, যে সেই অসুখে আক্রান্ত অন্যান্যদের চিকিৎসায় সহায়তা করতে পারবে। আমার নিজের সিকল সেল উপসর্গ সামলানো ও কাজ করার মাঝে আমি খুব কমই অবসর সময় পাই। আমি সবসময়ে রোগীদের দেখতে যাওয়ার ডাক পাই, কারণ আমার কাজকে আমি আন্তরিকতার সঙ্গে নিই এবং তাঁরা আমার মতামতকে মূল্য দেন। হাসপাতালে আমার কাজের সময় দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর হয়, কিন্তু সেটা আমাকে আনন্দ দেয়।

পৃথিবীর কাছে আমার বার্তা
সিকল সেল অসুখ আপনাকে আটকে রাখতে পারে না। সিকল সেল অসুখ আমাকে উদ্দীপ্ত করে যাতে আমি আরও কাজ করি, এগিয়ে চলি, নিজেকে আরও ভাল গড়ে তুলি, ও অন্যদের দেখাই যে আমিও পারি। সিকল সেল অসুখ আমাকে লড়াই করতে ও সফলতার জন্য নিজেকে মানিয়ে নিতে শিখিয়েছে। আমি বুঝতে পেরেছি যে, আমার বাবার কাছ থেকে শেখা কঠোর শ্রম, সংকল্প, ও দৃঢ়চেতনার মাধ্যমে আমার সব আশা ও স্বপ্ন আমি ছুঁতে পারব। কোনও খারাপ চিন্তাকে পালটে ফেলে আমি রোগীদের সহায়তা করতে কাজে লাগাই, ঠিক যেরকম আমার প্রতি, ভাইয়ের প্রতি, ও বাবার প্রতি ভালবাসা থাকে। আমি জীবনকে জড়িয়ে ধরে মেনে নিয়েছি, কারণ আমি এটা বদলাতে পারব না। যেভাবে আমি আমার গায়ের রঙ বদলাতে পারব না, সেভাবেই আমি আমার সিকল সেল অসুখ বদলাতে পারব না। আমি এটাকে ভালবাসি। আমি নিজেকে ভালবাসি। আমি আমার অসুখকে ভালবাসি। এটা আমাকে হতাশ করে। কিন্তু আমি এটা ভালবাসি, কারণ এটাও আমিই।

ইয়াগোর কাহিনি
25
সাও পাওলো
ব্রাজিল
আমি কে?
আমার নাম ইয়াগো। আমি ব্রাজিলে জন্মেছিলাম এবং আমি একজন সফল মডেল। আমি সিকল সেল অসুখ নিয়ে বেঁচে আছি। আমার কাহিনি কেবলমাত্র অসুখের সঙ্গে লড়াই করার নয়, বরং অসুখ নির্ধারণ করার লড়াইয়েরও কাহিনি।
আমার সিকল সেলের কাহিনি
আমি একজন খুব ফিট ও সুস্থ মানুষ, আমার গায়ের রঙ হালকা ও চোখের রঙ সবুজ। অনেক বছর আগে যখন আমি প্রথম অসুস্থ হয়েছিলাম, চিকিৎসকেরা বিশ্বাস করেননি যে, আমার সিকল সেল অসুখ হয়েছে। এমনকি একটা পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়ার পরেও, কেউ কেউ সেটা মেনে নিতে বা বিশ্বাস করতে পারেননি। সেটা অকল্পনীয় ছিল। চিকিৎসকেরা পরীক্ষার পজিটিভ ফলাফল বিশ্বাস করতে চাননি। আমার মা সেটা বিশ্বাস করে আমার সপক্ষে বলেছিলেন।

আমার পরিবার ও সিকল সেল অসুখ
যদিও আমার বাবা-মা বুঝতে পারেননি, কিন্তু উভয়েরই সিকল সেলের লক্ষণ ছিল। তাঁদের কাছ থেকেই এটা আমার ও আমার ভাই ইরানের শরীরে এসেছিল। আমার তুলনায় ইরানের সিকল সেল অসুখ অনেক গুরুতর ছিল ও তার যন্ত্রণা বেশি ছিল। এই বছরটা আমার পরিবারের জন্য খুব চরম, কারণ ইরানের শরীর ভাল যাচ্ছে না। আমরা সৌভাগ্যশালী যে, আমাদের বাবা-মা সর্বদা খুবই সহায়তাকারী। আমাদের বেড়ে ওঠার সময়, তাঁরা নিশ্চিত করেছিলেন যে, আমাদের সিকল সেল অসুখ আছে জানা সত্ত্বেও, আমাদের লক্ষ্য স্থাপনে ও সেটা অর্জনে যেন থেমে না থাকি।

আমার উদ্দেশ্য
আমার পরিবারের উৎসাহে, আমি সদর্থক করতে-পারি মনোভাব নিয়ে বড় হয়েছি। ধীরে ধীরে, আমার ছোটোবেলার কঠিন সময় কাটিয়ে উঠে মাথা উঁচু করে আমার অসুখের সঙ্গে লড়াই করতে শুরু করেছি। আমার অসুখ আমাকে থামিয়ে দিতে পারবে না। ঘটনা হল, এটা আসলে উলটো—এটা আমাকে প্রেরণা দেয়, যখন আমি পড়ে যাই তখন এটা আমাকে উঠে দাঁড়ানোর সামর্থ্য দেয়, এবং প্রতিটা নতুন দিনকে আহ্বান করতে শেখায়।

পৃথিবীর কাছে আমার বার্তা
মডেল হিসেবে আমার পেশার জন্য, দারুণ জীবনের জন্য, স্বাধীনভাবে ব্যায়াম করতে পারার জন্য, ও আমার সদর্থক মনোভাবের জন্য ঈশ্বরের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমি আশা করি, অন্যরাও তাঁদের রোগ নির্ণয়ের জন্য ও আমার সিকল সেল অসুখ সংক্রান্ত বৈষম্য ও অপমানের জন্য লড়াই জারি রাখবেন। আমি চাই অন্যান্য সিকল সেল অসুখে আক্রান্তরা শক্ত হয়ে এগিয়ে যেতে থাকুন।

ইরানের কাহিনি
16
সাও পাওলো
ব্রাজিল
আমি কে?
আমার নাম ইরান, আমার 16 বছর বয়স। আমি ব্রাজিলে জন্মেছিলাম ও বড় হয়েছিলাম। আমার ও আমার বড় ভাই ইয়াগোর সিকল সেল অসুখ আছে। সিকল সেল অসুখে ভোগা সত্ত্বেও, আমি পড়াশোনা করার জন্য স্কুলে যাই। আমার কাছে স্কুল একটা স্বাভাবিক বিষয়। আমি চাই, একটা জনসম্প্রদায় হিসেবে, আমরা সিকল সেল অসুখ সম্বন্ধে আরও খোলাখুলি আলোচনা করব।
আমার সিকল সেলের কাহিনি
আমার মেরুদণ্ডের নীচের দিকে সবথেকে বেশি যন্ত্রণা হয়। এটা খুবই বেদনাদায়ক হতে পারে। আমার ভাইয়ের অসুখের তুলনায়, আমার যন্ত্রণা আরও বেশি হয় এবং হাসপাতালে অনেক বেশি সময় থাকতে হয়। আমার সিকল সেল অসুখ অনেক বেশি দুর্বল করে ও সীমাবদ্ধ করে। আমরা সত্যিই জানি না এরকম কেন হয়েছে। আমরা শুধু এটাই জানি যখন আমাকে হাসপাতালে যেতে হয়, ভাইয়ের তুলনায় আমার যন্ত্রণা আরও খারাপ হয়। এই মুহূর্তে এটা নিয়ন্ত্রণে আছে।

আমার ভাইয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক
ইয়াগো ছাড়া আমি কাউকে চিনি না, যার সিকল সেল অসুখ রয়েছে। অসুখের যন্ত্রণার সঙ্গে লড়াই করার সময়ে কথা বলার জন্য আমার ভাইয়ের মতো একজনকে পেয়ে আমি খুশি। এটা আমাদের একত্রে আরও ঘনিষ্ঠ করেছে। যখন আমার ব্যথা করে, আমি সেটা নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে পারি এবং সে জানে আমি কেমন অনুভব করি। আমার দেখে অভিভূত লাগে যে, আমার ভাই মডেল হিসেবে কাজ করে কীভাবে তার অসুখ সম্বন্ধে সজাগ থাকে এবং তার সমস্যা সত্ত্বেও এখনও তার একটা পেশা আছে। সে যেভাবে নিয়মিত ব্যায়াম করে ও জিমে গিয়ে নিজেকে ফিট ও সুস্থ রাখে, সেটা আমি শ্রদ্ধা করি। এতে আমি অনুপ্রাণিত হই ও আমাকে আশা যোগায় যে, আমিও আমার অসুখের সঙ্গে লড়াই করে জিতব।

সিকল সেল সম্বন্ধে আমার দৃষ্টিভঙ্গি
আমি জানি, সিকল সেল অসুখে আক্রান্ত বহু মানুষ আছেন, কিন্তু তাঁদের মধ্যে অনেকেই সম্ভবত লজ্জা পান বা লুকিয়ে রাখেন, যেটা ভুল। আমি ও ইয়াগো দুজনেই একইভাবে আমাদের সিকল সেল অসুখকে দেখি—আমরা এটা লুকোই না ও আমরা এটা নিয়ে লজ্জা পাই না। আমরা অসুখ নিয়ে সর্বদা বসে বসে কথা বলি না। আমরা আমাদের জীবনে এগিয়ে চলি। আমরা খোলাখুলি থাকতে চেষ্টা করি এবং চাই যে, অন্যরাও এই অসুখকে আরও ভালভাবে বুঝুন। আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা জানে যে, আমার এটা আছে এবং এটা অন্যরা জানলে আমার খারাপ লাগে না। আমি মনে করি না যে, মানুষ এটা জানলে বড় কোনও সমস্যা হবে। আমি মনে করি না যে, আমাকে এটা চিরকাল লুকিয়ে চলতে হবে। মানুষ জানলে সেটা ঠিকই আছে। প্রশ্নটা হল, তাঁরা কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেবেন, তাঁরা কি ভাববেন, এবং তাঁরা কি বলবেন।

পৃথিবীর কাছে আমার বার্তা
আমি সত্যিই বিশ্বাস করি, সিকল সেল অসুখ সম্বন্ধে মানুষের জানা ও সেটা নিয়ে কথা বলা উচিৎ। এতে আক্রান্তদের অসুখের অভিজ্ঞতার ও চিকিৎসকদের চিকিৎসা করার পথ পরিবর্তন হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। সিকল সেল অসুখ নিয়ে খোলাখুলি কথা বলা জরুরী—সেটা করলে অসুখের সঙ্গে জড়িত অপমান মুছতে পারে, এবং সেটা সাধারণের গ্রহণযোগ্য বিষয় হয়ে উঠতে পারে।

ক্যারোলিনের কাহিনি
24
ক্যাম্পিনাস
ব্রাজিল
আমি কে?
আমার নাম ক্যারোলিন, আমি ব্রাজিলে জন্মেছিলাম। আমি একজন পার্সোনাল স্টাইলিস্ট হিসেবে ফ্যাশনের কাজ করি। আমার ও আমার আন্টির সিকল সেল অসুখ আছে। আমার 16 বছর বয়সী বোনের সিকল সেল অসুখ নেই। আমাকে আমার রুটিন বদলাতে হয়েছে, কিন্তু এখনও আমি আশাবাদী হয়ে আমার স্বপ্নের পিছু করছি।
আমার সিকল সেলের কাহিনি
আমার মাত্র কয়েক মাস বয়সে আমার পরিবার জানতে পেরেছিল যে, আমার সিকল সেল অসুখ আছে। আমার আন্টিরও 4 বছর বয়সে তাঁর সিকল সেল অসুখ ধরা পড়েছিল এবং তিনি আমার থেকে বেশি ভোগেন। আমার প্রথমদিকের স্মৃতিগুলোর মধ্যে একটা ছিল খুব খারাপ ব্যথাবেদনা হওয়ার। আমার মনে আছে এত যন্ত্রণা করছিল যে, আমি মরে যেতে চেয়েছিলাম—সেটা ভয়ানক ছিল। সেরকম যন্ত্রণা যেন কারও না হয়। আমি বাঁচতে চাইছিলাম না। আমার ঠাকুমা আমাকে ব্যথায় কাতর দেখে বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন, কিন্তু আমাকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, আমি ভাল হয়ে যাব। তিনি সবসময় আমাকে চাঙ্গা করতে চাইতেন, আশাবাদী থাকার গুরুত্ব সম্বন্ধে খুব ছোটো বয়স থেকে আমাকে শিখিয়েছিলেন। তিনি আমাকে বলেছিলেন, “এরকম বলবে না। তুমি ভাল হয়ে যাবে।” তাই, তারপর, আমি শান্ত হতে চেষ্টা করেছিলাম এবং সেটা আমার ব্যথা অনেক কমিয়ে দিয়েছিল। সাধারণত সিকল সেল অসুখের জন্য আমার ব্যথাবেদনা হয় না, কিন্তু সম্প্রতি আমি জানতে পেরেছি এটা আমার মস্তিষ্কের ক্ষতি করেছে। আমার মস্তিষ্কে কম অক্সিজেন যাওয়ার জন্য আমার মাথা ব্যথা হয়, যেটা প্রাণনাশক হতে পারে।

আমার সহায়ক ব্যবস্থা
অসুখের সম্বন্ধে খোলাখুলি হওয়ার ফলে আমি একটা নির্ভরযোগ্য ও সহানুভূতিশীল সহায়ক ব্যবস্থা পেয়েছি। স্কুল জীবনে, আমার ঠাকুমা লোকজনকে জানাতেন যে, আমার সিকল সেল অসুখ আছে এবং তার ফলে কি হতে পারে। ফলে আমার অবস্থাটা বুঝতে মানুষের পক্ষে সহজ হয়েছিল, তাই আমার ব্যথাবেদনার সময় তাঁরা আমাকে সহায়তা করতে পারতেন। যখন আমি হাসপাতালে থাকতাম, আমার বন্ধুরা হাসপাতালে হোমওয়ার্ক ও বইপত্র নিয়ে আসত, যাতে আমি বিছানায় থেকেও পড়াশোনা করতে পারি। আমার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমি কঠোর শ্রম করতাম, তাই বাকি ক্লাসের থেকে আমি বেশি পিছিয়ে পড়তাম না। আমার জীবনের সেরা মানুষ ছিলেন আমার মা। আমার অসুখ ধরা পড়ার পর তিনি অনেক দিন যাবত কেঁদেছিলেন, কিন্তু শেষমেশ, তিনি নিজের ইচ্ছা মতো কাজকর্ম বিসর্জন দিয়ে আমার জন্য তাঁর সাধ্য মতো প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন। তিনি জিদ করেছিলেন যে, অন্যান্য শিশুদের মতোই আমাকে তিনি বড় করবেন ও আমাকেও সেরকম অনুভব করতে শিখিয়েছিলেন। আমি বুঝেছি যে, আমি স্বাভাবিক কিন্তু আমার একটা অসুখ আছে। এবং এই অসুখের জন্য একটু যত্ন, একটু মনোযোগের দরকার হয়। আমি যখন বাড়িতে ফিরি, আমার মা সবসময় আমাকে মনে করিয়ে দেন যে, আমি একজন সবল মানুষ। তিনি সবসময় আমাকে ভাল রাখেন।

আমার সংগ্রাম
আমি একজন স্টাইলিস্ট হিসেবে মানুষকে সহায়তা করে ফ্যাশনের দুনিয়ায় কাজ করে আমার স্বপ্ন সাকার করেছি। এখন আমি গ্র্যাজুয়েট হওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের ও তাঁদের পরিবারের সঙ্গে কাজ করছি, যাতে তাঁদের গ্র্যাজুয়েশনের পার্টিতে তাঁদের পোশাকের বিষয়ে আমি সহায়তা করতে পারি। আমি সত্যিই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই, যাতে আমার পেশায় আমি উন্নতি করতে পারি। মাঝেমাঝে জীবিকা ক্ষেত্র এমন সমস্যায় পূর্ণ থাকে যে, আমি অন্যান্যদের বিরাগভাজন হয়ে যাই। যখন আমি কাজের সুযোগ হারাই, তখন আমি সবসময় অপ্রসন্নতার প্রকাশ দেখতে পাই। এটা একরকমের পর্দা দেওয়া বৈষম্য। এই অসুখ আমার দৈনন্দিন জীবনেও ক্ষতি করেছে। আমার মনে হয়, আমি 18 বছর বয়সে যেসব কাজ করতে পারতাম, সেসব এখন করতে পারব না, যেমন সারাদিন স্কুলে থাকার পর জিমে বা সাঁতারের ক্লাসে যাওয়ার এনার্জি পাওয়া। আমি এখনও এগুলো করতে পারি, কিন্তু তারপর আমাকে কয়েকদিন ধরে ঘুমোতে হবে। আমাকে আমার রুটিন, আমার কাজের দিন, ও জীবনের সমস্যার প্রতি আমার দৃষ্টিভঙ্গি পুরোপুরি বদলে ফেলতে হয়েছে, কারণ আমার খুব ক্লান্ত লাগে। আমি বুঝতে পেরেছি যে, আমি সীমাবদ্ধ এবং আমি যেরকম, আমি যা যা করতে পারি, এবং নতুনভাবে বাঁচার উপায় ইত্যাদি আমার জীবনে নিজের জন্য মানিয়ে নিয়েছি।

পৃথিবীর কাছে আমার বার্তা
সবসময় মনে রাখবেন যে, আমরা সম্মান পাওয়ার যোগ্য। আমাদের যন্ত্রণা ও জীবন আপনার থেকে আলাদা। আমরা স্বাভাবিক হওয়ার জন্য প্রতিদিন আমাদের শরীরের সঙ্গে লড়াই করি এবং আমাদের চাওয়া সবকিছু করি। পরিবার ও বন্ধুদের ভালবাসা ও সহায়তায় আমি নিজেকে সদর্থক রাখতে পেরেছি, এবং সেটা আপনিও পারবেন!

লাভলির কাহিনি
20
উড়িষ্যা
ভারত
আমি কে?
আমার নাম লাভলি, আমি ভারতে জন্মেছিলাম। আমার 20 বছর বয়স এবং আমরা 4 জন ভাই-বোন। আমার 2 জন বড়ভাই সর্বদা সুস্থ ছিল, কিন্তু ছোটোবেলা থেকেই আমি ও আমার বোন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম, এবং সিকল সেল অসুখের সঙ্গে লড়াই করতে করতে ঘটনাক্রমে জ্বর ও কম হিমোগ্লোবিনের জন্য বোন মারা গিয়েছিল। যদিও আমি বেঁচে গিয়েছি, কিন্তু এই অসুখ আমার বোন ও শৈশবকে কেড়ে নিয়েছে।
আমার সিকল সেলের কাহিনি
আমার 12 বছর বয়সে, আমার সিকল সেল অসুখ ধরা পড়েছিল। শরীরে, গাঁটে, ও পিঠে মারাত্মক ব্যথা, সেই সঙ্গে মাথা যন্ত্রণা সহ গতানুগতিক উপসর্গগুলো আমার ছিল। আমি সবসময়ে ভুগতাম। আমার আঙুলের গাঁট থেকে যন্ত্রণা শুরু হয়ে শরীরের অন্যান্য গাঁটে ও সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ত এবং সেটার সঙ্গে যুঝতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে যেতাম। শারীরিক ও আর্থিকভাবে আমাকে সহায়তা করার জন্য আমি অন্যদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলাম। আমার বাবা তাঁর সমস্ত সঞ্চয় আমার খরচ ও হাসপাতালের বিল মেটাতে কাজে লাগিয়ে ছিলেন, এবং একসময় তিনি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। আমার পরিবারের পক্ষে জীবন সত্যিই কঠিন হয়ে গিয়েছিল।

মৃত্যুর সম্মুখীন হওয়ার অভিজ্ঞতা
বেদনার সময়, আমি হাঁটতে বা এমনকি দাঁড়াতেও প্রায় পারি না। আমাকে আমার মা বয়ে বয়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যান, কিন্তু বয়ে নিয়ে গেলেও আমার যন্ত্রণা হয়। সিকল সেল অসুখের বেদনায় আমার মনে হয় আমি মারা যাচ্ছি। যখন আমার হিমোগ্লোবিন কমে 4.0 হয়েছিল, আমি ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম, ঠিক যেমন আমার বোনের মৃত্যুর সময় হয়েছিল। আমাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আমি সব আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম।

জীবনের জন্য নতুন সুযোগ
ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, আমি সেরে উঠেছি এবং এখন আমার উপসর্গগুলো ঠিক হতে শুরু করেছে। যখন আমি ছোটো ছিলাম, আমার স্বাস্থ্যের প্রচুর সমস্যা ছিল, কিন্তু এখন আমি ঠিকঠাক সুরক্ষা পাচ্ছি এবং আমার স্বাস্থ্য ভাল হয়েছে। শেষমেশ আমি স্বাভাবিক বোধ করছি। এখন আমি কাজ করি এবং আমার পরিবারের জন্যও খরচ যোগাই। আমি বাড়ির খরচ ও বিলের দেখভাল করি, যেমন আমাদের ভাড়া ও ইলেক্ট্রিসিটি।

পৃথিবীর কাছে আমার বার্তা
সিকল সেল অসুখে আক্রান্ত সকলে আমাকে দেখুন। আমি আশা হারাইনি। আমি বহুবার অসুস্থ হয়েছি, এমনকি যখন মনে হচ্ছিল আমি মারা যাচ্ছি, তখনও আমি আশা ছাড়িনি এবং সেইজন্যই আমি সেরে উঠেছি। আপনার এই অসুখ আছে বলে অনুৎসাহিত হবেন না। মনে রাখবেন, সিকল সেল অসুখে আক্রান্ত মানুষরাও স্মার্ট ও প্রতিভাবান হন। অন্যান্য সুস্থ মানুষদের থেকে নিজেকে আলাদা বলে মনে করবেন না। যেকোনও স্বাভাবিক মানুষের মতোই, কেবল পিছনদিকে নয়, আমরা সামনের দিকেও এগোতে পারি। প্লিজ, আশা ছাড়বেন না!

প্রিয়াঙ্কার কাহিনি
23
হায়েদ্রাবাদ
ভারত
আমি কে?
আমার নাম প্রিয়াঙ্কা, আমার 23 বছর বয়স, আমি ভারতে থাকি। আমার পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি, যার সিকল সেল অসুখ আছে যে বাহক, যদিও তাঁদের কারও পরীক্ষা করাও হয়নি। আমি শুধু এটুকু জানি যে, অনেক দূরের কোনও আত্মীয়ের এই অসুখ আছে এবং আমার ভাই ছোটোবেলায় একটা সংক্রমণের জটিলতায় মারা গেছিল। যদিও কখনও তার সিকল সেল অসুখের পরীক্ষা করানো হয়নি, তবু আমার মনে হয় সে এই অসুখে ভুগেই মারা গেছিল।
আমার সিকল সেলের কাহিনি
যখন আমি ছোটো ছিলাম, আমার পায়ে মারাত্মক যন্ত্রণা ও আমার হাত অদ্ভুতভাবে ফুলে যাওয়ায় একজন চিকিৎসক আমার সিকল সেল অসুখ ধরতে পেরেছিলেন। প্রথমবার যখন আমার ব্যথাবেদনা হয়েছিল, তখন আমার শ্বাসকষ্ট হয়েছিল ও আমি ব্যথায় দমবন্ধ হয়ে গেছিলাম। সেটা বিদ্যুতের মতো আমার সারা দেহে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং আমি নড়াচড়া করতে পারছিলাম না। ভাগ্য ভাল, আমার চিকিৎসক সিকল সেল অসুখ বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি একটা সামান্য রক্ত পরীক্ষা করিয়েছিলেন এবং আমি জানতে পেরেছিলাম আমার এই অসুখটা আছে।

আমার কাজ করার সমস্যা
যদিও আমি একজন বিউটিশিয়ান হিসেবে ট্রেনিং নিয়েছি, এবং টেলিমার্কেটিং-এও নিয়েছি, তবুও আমার মাইনে সবসময়ে কম ছিল, তাই আমাকে আর্থিকভাবে সমস্যায় থাকতে হয়েছে। যখন আমি কাজ করতাম, প্রায় প্রতি সপ্তাহে আমার ব্যথাবেদনা হত, প্রত্যেকবার 3 থেকে 4 দিন ব্যথাটা চলত। ব্যথাবেদনা এত ঘনঘন হত যে, আমাকে কাজ করা বন্ধ করতে হয়েছিল এবং আমি মাইনে পেতাম না। রোজগার ছাড়া, 3 মাস যাবত আমি হাসপাতালে যেতে বা কাজে যেতে পারিনি, এবং আমার খাবারের জোগাড় করতে পারিনি। পিঠে ব্যথার কারণে, আমি বসতে পারতাম না। পায়ে ব্যথার কারণে, আমি হাঁটতে বা দাঁড়াতে পারতাম না। বাইরে বেরোনো আমার পক্ষে কঠিন ছিল। আমি সম্পূর্ণ আটকে পড়েছিলাম।

সিকল সেল অসুখের সঙ্গে ডেটিং
একবার আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম এই অসুখ নিয়ে বেঁচে থাকার যুক্তিটা কি, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, আমার যন্ত্রণা কম হয়েছে ও বেদনা কমেছে। সিকল সেল অসুখ নিয়ে আমার ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আমি আশাবাদী অথচ বাস্তববাদী থেকেছি। আমি দেখেছি বেশি জল খেয়ে, সময় মতো ওষুধ খেয়ে, ও ঠিকঠাক খাবার খেয়ে আমার উপসর্গগুলোকে ঠিকঠাক রাখতে পারি। আমার জীবনে একটা সমস্যা নিশ্চল রয়েছে, যদিও সেটা আমার পারার বা না পারার বা উচিৎ কিনা সেই দ্বিধা, সেটা হল আমি কখনও বিয়ে করব কিনা। আমার মনে হয়, আমি যদি কখনও বিয়ে করি, তাহলে আমার অনুভূতি, যন্ত্রণা, ও ভোগান্তি বুঝতে আমার জীবনসঙ্গীর পক্ষে কঠিন হবে। সেই সমস্যা এড়ানোর জন্য, আমি একলা থেকেই খুশিতে বাঁচব। কোনও পরিবার, সঙ্গী, ভাই-বোন, বা বন্ধুর উপর মানসিক ও আর্থিক ধকলের বিষয় বাদ দিন, সিকল সেল অসুখ ইতিমধ্যেই আমার অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে।

পৃথিবীর কাছে আমার বার্তা
আমার মনে হয়, এই অসুখ সম্বন্ধে তথ্যাদি জানিয়ে গ্রামাঞ্চলে সচেতনতা নিয়ে আসা আমাদের জন্য জরুরী। আমি তাঁদের পরীক্ষা করানোর বিষয়ে জানাতে চাই, যাতে তাঁরা তাঁদের অসুখের প্রাথমিক অবস্থায় সেটা ধরতে পারেন, এবং তাঁরা যাতে বুঝতে পারেন সিকল সেল অসুখ হওয়াটা লজ্জাজনক কিছু নয়। যখন আমি আমার সিকল সেল অসুখের ব্যাপারে লোকজনকে জানিয়েছিলাম, তাঁরা আমাকে দয়া ও সহানুভূতি দিয়েছিলেন। আমি অন্যান্য আক্রান্তদের কাছে দয়া ও সহানুভূতি নিয়ে পৌঁছতে চাই। সিকল সেল অসুখ আমার জীবনের পথে সমস্যা এনেছে ও বদলে দিয়েছে, কিন্তু সেটা আমাকে থামাতে পারেনি—আমাদের দরকার এই অসুখ সম্বন্ধে ও কীভাবে পরীক্ষা করানো হয় সেই সম্বন্ধে মানুষকে জানানো। আমাদের একসঙ্গে লড়াই করতে হবে।

বিরাজবীর ও পুষ্পিতের কাহিনি
15 ও 13
ছত্তিসগড়
ভারত
আমরা কারা?
আমাদের নাম বিরাজবীর ও পুষ্পিত, আমরা ভারতের রাজ্য ছত্তিসগড়ের গ্রামীণ অঞ্চলে জন্মেছিলাম। আমাদের দুই ভাইয়ের সিকল সেল অসুখ আছে। যদিও আমরা অসুস্থ, তবু ভবিষ্যতের প্রতি আমাদের আশা আছে। যখন বিরাজবীর বড় হবে, তখন সে ইঞ্জিনিয়ার হয়ে মুম্বাইয়ের মতো বড় শহরে কাজ করতে চায়। পুষ্পিত বড় হয়ে চিকিৎসক হতে চায়, কারণ চিকিৎসকেরা মানুষকে সারিয়ে তুলতে যে কাজ করেন সেটা সে পছন্দ করে। সে চায় আমাদের গ্রামের মতো ছোটোখাটো জায়গায় থেকে কাজ করে অন্যান্য শিশুদের সারিয়ে তুলতে।
আমাদের সিকল সেলের কাহিনি
সিকল সেল অসুখের জন্য আমরা অনেক কিছু করতে পারি না। আমাদের পছন্দের কিছু কিছু কাজ করা আমাদের পক্ষে কঠিন হয়। বিরাজবীর পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাঁতার কাটতে চায়, এবং পুষ্পিত খেলতে ও পড়তে চায়, কিন্তু আমাদের সমস্যার জন্য এই কাজকর্মগুলো করা সমস্যাজনক হয়। সিকল সেল অসুখ আমাদের বিহ্বল করে তোলে এবং এত ভীষণ পেট ব্যথা করে যে, মাঝেমাঝে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি। সিকল সেল অসুখের কারণে, আমাদের প্রচুর সমস্যায় ভুগতে হয়।

আমাদের পড়াশোনা
আমরা সক্ষম, উজ্জ্বল, ও পরিশ্রমী ছেলে, আমাদের প্রিয় বিষয় অঙ্ক ও হিন্দি, কিন্তু এই অসুখ আমাদের পড়াশোনা বিঘ্নিত করেছে। ব্যথাবেদনার জন্য বহুবার আমাদের স্কুল কামাই হয়েছে। ব্যথাবেদনার সঙ্গে পেটে সাংঘাতিক যন্ত্রণা হয়, ফলে আমাদের হাসপাতালে যেতে হয়। আমাদের বাড়ি থেকে হাসপাতাল অনেক দূরে এবং আমাদের সেই জায়গাটা ভাল লাগে না, তবে চিকিৎসকেরা যখন আমাদের সারিয়ে তোলেন তখন ভাল লাগে।

আমাদের বন্ধুত্ব
সাধারণত আমরা কেউই লোকজনকে বলি না আমাদের সিকল সেল অসুখ আছে, কারণ এটা নিয়ে আমাদের গ্রামে বিশেষ কেউ কথা বলে না। মনে হয়, আমাদের যুদ্ধে আমরা একাই—আমাদের পরিবারে একমাত্র আমরাই ভুগছি, কিন্তু নিশ্চয়ই আমাদের গ্রামের মধ্যে সিকল সেল অসুখে আক্রান্ত একমাত্র আমরা নই।

পৃথিবীর কাছে আমাদের বার্তা
এই অসুখে আক্রান্ত অন্যান্য শিশুদের আমরা আশাবাদী থাকার জন্য উৎসাহ দেব। সাহস রেখে এই সমস্যাকে জানলে ভাল হওয়া যায়। আমাদের সকলের আশা ও স্বপ্ন আছে, এবং এটা আমাদের থামাতে পারবে না। ভালভাবে খেলা করো, ভালভাবে খাও, এবং তোমার অসুখ নিয়ে বেশি চিন্তা কোরো না। এবং সর্বোপরি, কখনও আশা হারিও না।

টেডের কাহিনি
18
নাইরোবি
কেনিয়া
আমি কে?
আমার নাম টেড, আমি কেনিয়াতে জন্মেছিলাম। আমার 18 বছর বয়স। আমার বাবা ফিনান্সের কাজ করেন ও মাঝেমাঝেই তানজানিয়ায় যান এবং আমার মা বারবার ব্যবহারের যোগ্য বাজারের ব্যাগ তৈরির একটা কারখানা চালান। আমার 2 জন ভাই আছে, কিন্তু পরিবারের মধ্যে একমাত্র আমারই সিকল সেল অসুখ আছে। আমি চাই না আমার ইচ্ছে মতন কাজ করতে ও আমার লক্ষ্য অর্জন করতে সিকল সেল কোনও বাধা হোক।
আমার সিকল সেলের কাহিনি
আমার জন্মের 2 দিন পরেই আমার সিকল সেল অসুখ ধরা পড়েছিল। সেটা শোনার পর আমার বাবা-মা ভেঙে পড়েছিলেন, এবং সেই খবরের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে তাঁদের অনেক সময় লেগেছিল। আমার অসুখ আশা ও ভালবাসার সঙ্গে সুনিশ্চিতভাবে সামলানোর জন্য আমার বাবা-মা দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেই একই দৃষ্টিভঙ্গি আমিও নিয়েছিলাম। আমি আশা ও সদর্থক চিন্তা ছড়িয়ে দিতে চাই। মাঝেমাঝে সেটা কঠিন হতে পারে। দুঃখজনকভাবে, সিকল সেল অসুখে আমার প্রিয় বন্ধু নিকোলে মারা গিয়েছিল। বন্ধু বা পরিবারের কেউ মারা গেলে, আপনি নিশ্চল হয়ে কাজকর্ম বন্ধ করে দিতে পারেন, বা সেটাকে মনে রেখে কাটিয়ে উঠে সেটা কাজে লাগিয়ে সেখান থেকে শক্তি খুঁজে নিতে পারেন। নিকোলে মারা যাওয়ার পর আমি কাতর হয়ে পড়েছিলাম, কিন্তু আমি এখনও আমাদের বন্ধুত্ব মনে রেখে সেখান থেকে শক্তি পাই।

টেড দাবা খেলছে
আমি সম্প্রতি নাইরোবির হাই স্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েট হয়েছি। আমার স্কুলের ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা একটা ইউটিউব সিরিজের সঙ্গে যুক্ত, যেখানে আমাদের স্কুলের সেরা ও চমৎকারদের সম্বন্ধে দেখানো হয়। আমার বন্ধু গায়ক ও গিটার বাদক জোনাথানের সঙ্গে আমি সেটা উপস্থাপনা করি। আমার বন্ধুরা আমাকে সত্যিই ভালবাসে ও খেয়াল রাখে। আমি যখন স্কুল কামাই করি ও হাসপাতালে থাকি, তখন তারা আমাকে নিয়ে চিন্তিত হয়। যখনই স্কুলে আমার ব্যথাবেদনা হত, আমি বাড়িতে বা হাসপাতালে যেতে চাইতাম না। আমার মনে আছে একবার আমার শিক্ষক-শিক্ষিকা ও বন্ধুরা দেখেছিল যে, আমার প্রচণ্ড যন্ত্রণা করছিল এবং তারা আমাকে বাড়িতে গিয়ে বিশ্রাম নিতে বলেছিল, কিন্তু আমি সেই কথা অমান্য করে সারাদিন প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলাম। সিকল সেলের ব্যথা আমাকে হারিয়ে দেবে না বা সীমিত করবে না, সেই বিষয়ে আমি অনড় ছিলাম।

আমার সফর ও লক্ষ্য
আমার সফরের নিজস্ব ওঠাপড়া আছে। আমার বন্ধুরা ও পরিবার আমাকে সহায়তা করে। সেইজন্য আমার সত্যিই খুব সহায়তা হয়। সিকল সেল অসুখকে আমি একটা সুযোগ হিসেবে দেখি, যেখানে আমি অন্যদের জীবন উপভোগে উৎসাহ দেওয়ার সুযোগ পাই। আমি দৃঢ়, বহমান, ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী থাকতে চেষ্টা করি—আমার লক্ষ্য একদিন আমি রাষ্ট্রদূত হব, যাতে সারা পৃথিবীতে আমি সিকল সেল অসুখ সম্বন্ধে সচেতনতা বাড়াতে পারি। আমি জানি সেটা সমস্যাবহুল হবে, কিন্তু আমি পরিপূর্ণ ও ব্যস্ত জীবন কাটানোর জন্য একটা উপায় খুঁজে পেয়েছি ও মানিয়ে নিয়েছি।

পৃথিবীর কাছে আমার বার্তা
মনে রাখবেন, সিকল সেল অসুখ আপনার ইচ্ছে মতন কাজকর্ম করার অন্তরায় নয়। আসলে সিকল সেল উৎসাহ দেয়। যদি আপনি ভালর দিকে ভাবেন, তাহলে মনে হবে কাজকর্ম করার জন্য আপনার কাছে কেবলমাত্র খানিকটা সময় কম আছে। কিন্তু যদি আপনি মনোযোগ দেন, তাহলে আপনি অন্যদের থেকে দ্রুত সেসব করতে পারবেন। আমি এটাকে এভাবেই দেখি। আমি এটাকে আমার সমস্যা মনে করি না। আমি আমার জীবন থেকে সেরাটা পেতে চেষ্টা করি। আমি ভরপুর আনন্দ করতে চাই, কিন্তু আমি আমার বাধাগুলো জানি। আপানকে আপনার শরীরের কথা বুঝতে হবে। আপনি অন্যদের মতো সব কাজ হয়ত করতে পারবেন না, এটা আপনাকে মেনে নিতে হবে। কিন্তু যখন সেটা করবেন, তখন আপনার সেরা কাজ করবেন।
যেসব মানুষদের কাহিনি অকথিত আছে, তাঁদের বলতে সুযোগ দেওয়া
বিশ্বমানের স্বাস্থ্য চিকিৎসক ও ফটোগ্রাফার ডাঃ কুমার বিশ্বব্যাপী বাধাবিপত্তি ও অনুপ্রেরণার কাহিনি ও ছবি জানিয়েছেন, যাতে সিকল সেল অসুখ সম্বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি হয় ও মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে সহায়তা হয়। আপনি দেখতে পাবেন এই সমস্যায় আক্রান্ত মানুষ কীভাবে সেগুলি অতিক্রম করেন, কীভাবে তাঁরা আশান্বিত থাকেন, এবং কীভাবে তাঁরা অনুপ্রাণিত হন।
তাঁর সফরের বিভিন্ন রচনা, ভিডিও, ও ফটোগ্রাফের মাধ্যমে সিকল সেল অসুখে আক্রান্ত মানুষদের ও তাঁদের যত্ন প্রদানকারীদের প্রেরণামূলক কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে, এই পদক্ষেপের ফলে বিশ্ব জুড়ে মানুষের যন্ত্রণা কম করতে অসুখটির প্রতি আরও মনোযোগ পেতে সহায়তা হচ্ছে।